‘রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই বহন করতে হবে’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কক্সবাজারের পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে বলে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দু’বছরেরও বেশি সময় আগে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৫ লাখ শিশুই এখনো ক্লাসরুম পর্যন্ত পারেনি। ১৬ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক শরণার্থী ফোরামের আগে এই বিবৃতি দিল সংস্থাটি। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, রোহিঙ্গা শিশুদের যেহেতু খুব শীঘ্রই নিজেদের দেশে ফিরতে পারার সম্ভাবনা নেই তাই তাদের ভবিষ্যতের বিষয়টি চিন্তা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়খেই তাদের শিক্ষার বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি।

সাদ হাম্মাদি বলেন, "রোহিঙ্গা শিশুরা যেখানে রয়েছে, সেখানে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে নিজেদের ভবিষ্যত হারিয়ে যেতে দেখবে। এর ফলে ক্রমে তারা হারিয়ে যাওয়া একটি জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে পারে।"

অক্টোবর মাসে ইন্টার সেকশন কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের চালানো এক জরিপে উঠে আসে যে শরণার্থী শিবিরের ১৩১১টি রোহিঙ্গা পরিবারের এক তৃতীয়াংশেই অন্তত একজন প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলগামী বয়সী শিশু রয়েছে, যে স্কুলে যায় না।

"শরণার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর যেসব বিধিনিষেধ বর্তমানে রয়েছে তা উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নিজেদের পদক্ষেপ শুরু করতে পারে", মন্তব্য করেন সাদ হাম্মাদি।

এ মাসের শুরুতে ক্যাম্পের বাইরের স্কুলে রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখা করার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয় ওয়াশিংটন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকেও।

পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে তারা।

ক্যাম্পে শিক্ষাগ্রহণের কী ব্যবস্থা রয়েছে?
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে কোনো স্কুল-কলেজে পড়তে পারবে না। কারণ তাদের সেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনুমতি নেই। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে এ নিয়মটি বেশ কঠোরভাবে মানা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান নতুন ক্যাম্পগুলোতে ইতোমধ্যেই এক হাজার স্কুল পরিচালিত হচ্ছে এবং আরেকটি প্রকল্পের আওতায় আরও ৫০০ স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হবে শীঘ্রই।

এছাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল ও মাদরাসা ছাড়াও কুতুপালং ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে দুটি সরকারি স্কুল রয়েছে যেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া যায়।

তবে প্রাথমিক পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ যেন শেষ না হয়ে যায় তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা চলছে বলে সেপ্টেম্বরে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন দাতব্য সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেনের শিক্ষা বিষয়ক এক কর্মকর্তা।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে পাঁচ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুকিশোর রয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজারের বেশি। আর ১২ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সীদের সংখ্যা সোয়া এক লাখ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053091049194336