নারীর অগ্রযাত্রা আরও গতিশীল করতে পরিবার ও সমাজের চাপিয়ে দেয়া সংস্কার ভেঙে বেরিয়ে আসতে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।তিনি বলেছেন, নারীর পক্ষে অবস্থান নিলে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতেই হবে। কারণ জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের এই যে রাজনীতি সেই রাজনীতির মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য আরো প্রকট হয় এবং এরা নারীবিদ্বেষী। বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমস্ত বাধাগুলো মনের ভেতরে। আমাদের খুব ছোটবেলা থেকে বলা হয়, এটা কোরো না, ওটা কোরো না। ভাই যখন মাঠে খেলে বেড়াচ্ছে, বোনকে তখন ঘোমটা দিয়ে হাড়ি-পাতিল বা পুতুল দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই যে দেয়াল তুলে দেওয়া হয়, সেই দেয়াল ভেঙে বের হওয়ার যুদ্ধ আমাদের করতে হয়। এই যুদ্ধ করে যদি একবার বের হতে দেয়ালটা ভেঙে ফেলতে পারে তখন বাকি যুদ্ধ জয় করা তার জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ আয়োজিত দুদিনব্যাপী জেন্ডার ফেস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী।
নিজেদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদও।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা অনেক আছে। বড় প্রতিবন্ধকতা আমাদের চিন্তা-ভাবনায়। চিন্তা-ভাবনার এই জায়গাটা অতিক্রম করতে হবে।”
অধ্যাপক নাসরীন বলেন, এক সময় নারীদের পেশা বলতে শিক্ষকতা, ডাক্তার, নার্স প্রভৃতিতে সীমাবদ্ধ ছিল। আরে খেলাধুলা বলতে লুডু আর ক্যারাম। এখন সেখান থেকে অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু শহর-গ্রাম ও শিক্ষিত-অশিক্ষিত নারীর মধ্যে বৈষম্যটাও আমাদের দেখতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “পলিটিক্যাল ভয়েস ম্যাটারস। আমি যত ভয়েস দিই, এখানে ওখানে কথা বলি- এর চেয়ে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ।”
নারীর অবস্থানের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এলেও এখনো অনেক কিছু করার আছে বলে মন্তব্য করে তিনি।
উইমেন’স ডে বক্তৃতায় অধ্যাপক সাদেকা বলেন, “উত্তরাধিকারের সমান অধিকারের ক্ষেত্রে আমরা কিছু করতে পারিনি। এই জায়গাটাতে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
“এখনো একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী আমাদের নারীদের বিভিন্ন কিছু ঠিক করে দেয়। আমরা কতটুকু পড়ব, কোথায় থাকব এখনো অব্যাহত আছে। ইরাক, সোমালিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার রয়েছে।”
ভূমিতে নারীর অভিগম্যতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মাত্র ৪ শতাংশ নারীর ভূমিতে মালিকানা আছে। যারা অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান, তারাও ভূমির মালিকানাটা দিয়ে দিই। এই জায়গাগুলোতে আমাদের অধিকার নাই। অবস্থাপন্ন হিন্দু পরিবারের সদস্যরাও সেটা দিয়ে দিই।”
উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন সানজিদা আখতার বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নারীদের চ্যালেঞ্জগুলো সুনির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে আমাদের এগিয়ে চলার পথনির্দেশও আমরা করতে চাই।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশে ইউএসএইডের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ক্যাথলিন ব্রায়ান্ট বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ফিতা কেটে জেন্ডার ফেস্টের বইমেলা উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিকালের আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফারহিন খান জয়ীতা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে একই স্থানে আলোচনা, সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।