‘সম্রাটের সাম্রাজ্যে’ এখনো চাঁদাবাজি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গুলিস্তান ও কাপ্তানবাজার এলাকার বাসস্ট্যান্ড, লেগুনাস্ট্যান্ড ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির একক নিয়ন্ত্রণ ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের। ক্যাসিনো-জুয়াবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়ে তিনি এখন কারাগারে। তার পরও তাঁর সাম্রাজ্যে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। আগের মতোই প্রতিদিন ওই সব এলাকায় বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন ও ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ওমর ফারুক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এদিকে গেণ্ডারিয়া থানা শাখা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই দেশের বাইরে পালিয়ে যান। আর তাঁর ভাই একই এলাকার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়াকে এলাকায়ই দেখেছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রুপনও বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

গত বুধবার দুপুরে সরেজমিন কাপ্তানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক লাইনম্যান লেগুনার নম্বর লিখে রেখে চালকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। তাঁর তালিকায় তখন পর্যন্ত অন্তত ৫০টি লেগুনার নম্বর দেখা গেছে। ওই লাইনম্যানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি তাতে রাজি হননি।

লেগুনাচালকরা বলেছেন, লাইনম্যানের নাম রিপন। সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার আগে এই এলাকায় যারা চাঁদাবাজি করত, তারা এখনো করছে।

এক লেগুনাচালক জানান, রিপন তাঁর কাছ থেকে ৬০০ টাকা নিয়েছেন। এই টাকা না দিলে তাঁর লেগুনাই চালানো বন্ধ করে দেবে।

আরেক লেগুনাচালক দুঃখ করে বলেন, ‘ভাবছিলাম দ্যাশে যা শুরু হইছে আর মনে অয় চান্দা দেওন লাগবো না। কিন্তু কিসের কী? প্রতিদিনই তো চান্দা দিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন। কাপ্তানবাজার এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা চাঁদা তোলেন। চাঁদাবাজির এই টাকা যেত সম্রাটের পকেটে।

চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ নেই। কোনো লেগুনাচালক অভিযোগ করতে আসে না।’ তালিকা করে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে গোপনে কাউকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে বলুন। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন হবে।’

গত রোববার ভোরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা যুবলীগের সভাপতি সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেখানে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়ায় আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সম্রাটের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রোববার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালান। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অস্ত্র ও মাদক রাখায় সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। গ্রেফতারের পর সম্রাটকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এখনো অধরা এনু-রুপন : ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যেই গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকায় গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া, তাঁদের কর্মচারী ও তাঁদের এক বন্ধুর বাসা থেকে পাঁচ কোটি টাকা ও আট কেজি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে র‌্যাব। কিন্তু তাঁদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পলাতক দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি ও অর্থপাচার আইনে আরেকটি মামলা করে র‌্যাব। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সূত্রাপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী। আর অর্থপাচার আইনের মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

জানতে চাইলে কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমরা মামলা পাওয়ার পর এনু ও রুপনকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাওয়া যায়নি।’ 

গত বুধবার গেণ্ডারিয়া এলাকায় খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা শুনেছেন এনুর মতো রুপনও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও তাঁরা কিভাবে প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছেন, তা ভেবে অবাক লাগছে। যদি প্রশাসনের সহযোগিতা নাই পায় তা হলে তাঁরা কী করে বিদেশে পালিয়ে গেলেন?’

উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-জুয়াবিরোধী অভিযানের প্রথম দিন রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর র‌্যাব গ্রেফতার করে জি কে শামীমকে। তাঁরা দুজনই সম্রাটের ঘনিষ্ঠ। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রধান গ্রুপের কর্ণধার সেলিম প্রধান ও মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা লোকমান হোসেন ভূঁইয়া কারাগারে রয়েছেন। সর্বশেষ গ্রেফতারের পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট কারা হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059020519256592