পদ্মাসেতু: বড় পরিবর্তনের সুযোগ শিক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণেই অনেককিছুতেই পিছিয়ে ছিল দক্ষিণাঞ্চল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা সেতু চালুর ফলে বড় পরিবর্তন আসবে শিক্ষায়। সহজ হবে উচ্চশিক্ষার পথ। বাঁচতে কর্মঘন্টা। 

তবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না করে পরিকল্পনামাফিক অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক জেলায় কলকারাখানা স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যে জমি কিনেছে একাধিক শিল্প গ্রুপ। এসব কলকারখানার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। যা দক্ষিণাঞ্চল থেকেই জোগান দিতে হবে। এজন্য কোন এলাকায় কোন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান হতে পারে তা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

দেশে ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও বৃহত্তর ফরিদপুর অর্থাৎ ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ীতে মাত্র একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা গোপালগঞ্জে অবস্থিত। তাই বৃহত্তর ফরিদপুরের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই সাধারণত উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকামুখী হন। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলে সাধারণত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হন। অনেক অভিভাবকই তাদের মেয়েদের পড়ালেখার জন্য ঢাকায়ও পাঠাতে চান না। এর অন্যতম কারণ যোগাযোগের সমস্যা। দূরত্ব খুব বেশি না হলেও ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এতে অনেক পরিবারই নিরাপদ বোধ করেন না। পদ্মা সেতু চালুর পর সেই সমস্যা পুরোপুরিই কেটে যাবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকেই অবহেলিত দক্ষিণবঙ্গ। একটা অঞ্চলের উন্নয়ন যে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তা হচ্ছে অবকাঠামোগত সুবিধা। এ ক্ষেত্রে সমস্যায় ভুগছিল দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো। তাই পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে।’

 বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায়ই বিভিন্ন ধরনের স্কুল, কলেজ, ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান, তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) বিষয়ক প্রতিষ্ঠান থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞরা যেতে চাইতেন না। এ অঞ্চলের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েও শুধুমাত্র যোগাযোগব্যবস্থার কারণে মেধাবী ও দক্ষরা যেতে চাইতেন না। এমনকি শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করলেও তাতে ঢাকা থেকে শিক্ষাবিদরা যেতে আগ্রহী হন না। কিন্তু পদ্মা সেতু জ্ঞানের আদান-প্রদান অনেকটাই সহজ করে তুলবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘ যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতায় ভোগান্তিতে ছিলে দক্ষিনের মানুষ। পদ্মা সেতুর ফলে অন্যান্য খাতের সঙ্গে শিক্ষায়ও পরিবর্তন আসবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক বিনিময় বাড়বে। এ খাতে ব্যক্তি উদ্যোগ বাড়বে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রথমে বলব, এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ সহজ হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার ক্ষেত্রে যাতায়াত একটা বড় সমস্যা ছিল। আর ছাত্রীরা এক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়ত। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই বাধা দূর হয়ে গেল।’ তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে ঢাকায় ফ্রেশ খাদ্য সামগ্রী আসবে, কিছুটা সস্তায়ও পাওয়া যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু হল বা মেসে থাকে তারা এর সুফল পাবে।’

অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না করে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেলা শহরে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর সবাইকে যে উচ্চশিক্ষায় আসতে হবে সেটাও আমি মনে করি না। গ্রামেগঞ্জে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। ফলে পদ্মা সেতুর জন্য দক্ষিণাঞ্চলে যে শিল্পায়ন হবে তাতে সহজেই দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যাবে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের অনেক লোক বিদেশে থাকে। তাদেরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011839866638184