৫০৪ মাদ্রাসাকে শোকজ: ব্যর্থতায় এমপিও স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক নয়, কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাস না করায় ৫০৪টি মাদ্রাসাকেকারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। আগামী ৪ঠা জুনের মধ্যে ফল বিপর্যয়, কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া ইত্যাদির কারণ জানাতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত ও পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিল করা হবে। এছাড়াও ফল বিপর্যয় কাটিয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও জানাতে হবে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর দাখিল পরীক্ষায় যেসব মাদরাসা থেকে ১০ জনের কম শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে, পাসের হার ৫০ ভাগের নিচে (২০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়া), নয় জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এই ধরনের ৫০৪টি মাদরাসাকে গত ১২ই জানুয়ারি শোকজ করা হয়।

মাদ্রাসাগুলোর শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী কম কেন? বিগত তিন বছরের দাখিল পরীক্ষার ফল, মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা, প্রতি বছর শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান/সরকারি বেতন-ভাতাদি বাবদ ব্যয় এসব তথ্য বলা হয়েছিল।

তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গত ৭ই মে অধিদপ্তর থেকে ফের এসব মাদরাসার সুপারদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফলাফল বিপর্যয় প্রতিকারের জন্য সূচক নির্ধারণ ঠিক করে শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা নির্ধারণপূর্বক সম্ভাব্য কাঙ্ক্ষিত ফল উল্লেখক্রমে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে সন্তোষজনক জবাবসহ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদরাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, মাদরাসা শিক্ষার মান বাড়ানো এবং ফল বিপর্যয় ও কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কারণেই শোকজ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের আরো ভালো ফল করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত ফল করতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে যাতে ভালো ফল করতে পারে তার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মনোহরা দাখিল মাদরাসা সুপারের কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন পাস করেছে। পাসের হার নগণ্য, ফলাফল সন্তোষজনক নয়। মাদরাসা সুপার নোটিশের জবাবে বলেছেন, দাখিল শাখায় দুটি এবং এবতেদায়ী শাখায় একটি পদ শূন্য থাকায় পাসের হার কম। অধিদপ্তরের কাছে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায়  গত ৭ই মে ফের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাসের হার নগণ্য হওয়ার জন্য কী কী কারণ দায়ী তা যেমন চিহ্নিত হয়নি। তেমনি কারণগুলো দূর করার জন্য কী কী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তাও চিহ্নিত করা হয়নি। ফলাফল ভালো করার জন্য কী কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে উক্ত পরিকল্পনা কত দিনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে ও উক্ত পরিকল্পনায় শিক্ষকদের, ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা কি হবে। সর্বোপরি উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সম্ভাব্য কী কী ফলাফল পাওয়া যাবে এবং উক্ত ফলাফল পরিমাপের সূচক ঠিক করে পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক।

প্রথম দফায় কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার ধলডোবা বাগবতি দাখিল মাদরাসা থেকে পাঁচজন অংশ নিয়ে পাস করেছে মাত্র একজন। একই জেলার চল সালিমাবাদ মুসলিমিয়া দাখিল মাদরাসার ১৬ জনের মধ্যে পাস করেছে চার জন, ইডিএন মাহিলা দাখিল মাদরাসার ১১ জনের মধ্যে পাস করেছে তিনজন, দারুস সালাম দাখিল মাদরাসার সাত জনের মধ্যে পাস করেছে দুইজন, কোনাগাতি কেসি দাখিল মাদরাসার দুইজনের মধ্যে পাস করেছে মাত্র একজন, চৌহালি ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দুইজন অংশ নিয়ে পাস করেছে একজন। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রবিউল আউয়াল দাখিল মাদরাসা থেকে পাঁচজন অংশ নিয়ে পাস করেছে দুই জন। একই জেলার নওদা খারারা  নেছারিয়া দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদরাসা থেকে চার জন অংশ নিয়ে পাস করেছে দুইজন। লালমনিরহাটের বাদশাহ দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসা থেকে তিনজন অংশ নিয়ে পাস করেছে একজন। রাতিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দুইজন অংশ নিয়ে একজন পাস করেছে। একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি এমন মাদরাসাও রয়েছে কারণ দর্শানোর তালিকায়। এভাবে গত বছর সারা দেশে অর্ধ শতাধিক মাদরাসার দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003026008605957