ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে শুনানির চিন্তা সরকারের। সেই লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে নির্দেশনা দেয়া হবে। গতকাল শুক্রবার এমনটাই আভাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, সাত কার্যদিবসের মধ্যে মামলার সব রেকর্ড নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে যাবে। মামলার ১৬ জন আসামির প্রত্যেকেই ষড়যন্ত্র ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এ কারণে নিম্ন আদালত তাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স প্রস্তুত হলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়ে দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। মামলা নিষ্পত্তিতে যাতে কম সময় লাগে, সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমি কথা বলব।’ শনিবার (২৬ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন দিদারুল আলম।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে সালের ক্রম অনুসারে। সেই হিসাবে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি চলছে। বর্তমানে ৭৫০টি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন ফাঁসির আসামি কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। আর গড়ে বছরে হাইকোর্টে ৬০-৭০টি ডেথ রেফারেন্স মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে নুসরাত হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হতে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিচারপ্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে। সেদিক থেকে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ডেথ রেফারেন্স মামলার নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে আগামী দুই বছরের মধ্যে মামলাটি উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ ব্যবস্থায় মামলার পেপারবুক ছাপিয়ে থাকে। এর আগে পিলখানা হত্যা মামলা, সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার রাকিব, সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ এস আলী এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার ডেথ রেফারেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
আইজি প্রিজন্সের কাছে যাচ্ছে চিঠি
নুসরাত হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে কনডেম সেলে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ লক্ষ্যে আইজি প্রিজন্সের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছে ফেনী জেলা কারা কর্তৃপক্ষ। ঐ জেলা কারাগারে পৃথক কনডেম সেল না থাকায় এ চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। তবে ফেনী জেলা কারাগারের যেসব সেলে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা রয়েছে, সেগুলোকে ইতোমধ্যে কনডেম সেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রফিকুল কাদের। তিনি জানান, এসব সেলে থাকা আসামিদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, ফেনী জেলা কারাগারে যেহেতু কনডেম সেল নেই, সেহেতু আসামিদের কুমিল্লা কারাগারে পাঠানোর জন্য আইজি প্রিজন্স বরাবর চিঠি দেয়া হবে। কারণ কুমিল্লা কারাগারে অনেকগুলো কনডেম সেল রয়েছে। সেসব কনডেম সেল ফাঁকা থাকলে আসামিদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে ফাঁকা না থাকলে কাশিমপুরসহ যেসব কেন্দ্রীয় কারাগারে কনডেম সেল ফাঁকা রয়েছে, সেখানে আসামিদের পাঠিয়ে দেয়া হবে।
চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টে পাঠানো হচ্ছে ডেথ রেফারেন্স
চলতি সপ্তাহে নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠাবেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামনুর রশিদ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১)/৩০ ধারায় দেয়া ঐ মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠানো হয়ে থাকে। ৩৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে, তখন হাইকোর্ট বিভাগের কাছে কার্যক্রম পেশ করতে হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ অনুমোদন না করা পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, এটাই ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। এতে মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়, কেস ডকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সব নথি সংযুক্ত থাকে। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করে থাকে। পেপারবুক প্রস্তুতের পর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।