অঙ্কের নিয়ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কেন?

সাইফুল্লাহ হাসান নিনাদ |

পরীক্ষায় একই অঙ্ক দুজন শিক্ষার্থী দুটি ভিন্ন নিয়মে করে একই উত্তর বের করল। অথচ ফলাফলের সময় দেখা গেল, সেই অঙ্কেই একজন পূর্ণ নম্বর পেলেও অন্যজন পেয়েছে শূন্য। এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য শোনালেও অহরহ ঘটে চলছে দেশের শীর্ষস্থানীয় স্কুলগুলোতে। সারা বিশ্বেই শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক বিষয় হচ্ছে গণিত। এটা মুখস্থনির্ভর কোনো বিষয় না, সমপূর্ণটাই অনুধাবন এবং প্রায়োগিক ক্ষমতানির্ভর। গণিত শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীর এই বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান যাতে ব্যবহারিক জীবন থেকে শুরু করে উচ্চতর ক্ষেত্রে প্রয়োগ ঘটাতে পারে।

বলা যায়, একজন শিক্ষার্থীর মেধার সদ্ব্যবহারে গণিত চর্চার কোনো বিকল্প নেই। আর সেই চর্চা তখনই নিশ্চিত হয় যখন গণিতের আনন্দ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি দিনকে দিন ভয়ঙ্কর দিকে যাচ্ছে। গণিতের আনন্দ তো দূরে থাক, গণিত-ভীতির কারণেই বছর বছর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। আর গণিত-ভীতির জন্য দায়ী খোদ শিক্ষকরাই।
একটি অঙ্ক বিভিন্ন নিয়মে করা যেতেই পারে। বরং মূলধারার ব্যত্যয় না ঘটিয়ে বিভিন্ন নিয়মে অঙ্ক করাকে

উত্সাহিত করা উচিত। এতে মেধার সঠিক চর্চারও যেমন সুযোগ হয়, তেমনি গণিতের প্রতি ভালোবাসাও বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের। সেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় স্কুলগুলোতে অঙ্কের নিয়ম নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি চলে। নির্দিষ্ট দু-এক জন শিক্ষকের নিয়মের বাইরে অঙ্ক করলেই নম্বর কম এমনকী শূন্যও পেতে হয়। অঙ্কের ভেতরে ভাষার ব্যবহারে কিংবা যতিচিহ্নের একটু এদিক সেদিকেও সমপূর্ণ অঙ্ক কেটে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। পরিণামে তারা গণিত শেখার বদলে সেই গত্বাঁধা নিয়মেই অঙ্কের ভাষা মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসছে। যার জন্য শিক্ষার্থীদের মনে গণিত নিয়ে ভালোবাসা তো দূরের কথা, পাস করা কিংবা ভালো নাম্বার পেতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কোথাও কোথাও আবার শিক্ষকদের মধ্যেও দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার্থীদের হেনস্থার শিকার হতে হয়। কোনো স্যার এক নিয়মে অঙ্ক করান তো অন্য স্যার আর এক নিয়মে। এক স্যারের করানো নিয়মের অঙ্ক পরীক্ষার খাতায় দেখলে অন্য স্যার কেটে দেন। কোনো স্যার অঙ্কে ‘জনসংখ্যার’ পরে ‘জন’ শব্দটি লেখার জন্য নাম্বার কাটেন তো আরেক স্যার ‘জন’ শব্দটি না লেখার জন্য নাম্বার কাটেন। কোনো কোনো স্কুলে অঙ্কের নিয়মের নামকরণ সেই স্কুলেরই শিক্ষকদের নামে করা হয়, যেমন ‘অমুক স্যারের নিয়মে করানো অঙ্ক’। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মেধা প্রয়োগে নতুনভাবে অঙ্ক করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। আর এভাবেই ধ্বংস করা হচ্ছে সৃজনশীলতা।

গণিত কোনো কবির নির্দিষ্ট কোনো কবিতা নয় যে, একে পরীক্ষার খাতায় অবিকল মুখস্থ লিখতে হবে। এটা সমপূর্ণই আনন্দ নিয়ে চর্চার বিষয়। তাই গত্বাঁধা ২/১ নিয়মেই অঙ্ক মুখস্থ করতে নয়, বরং গণিতের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে আনন্দ আকারে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। নতুন নতুন পদ্ধতিতে অঙ্ক কিংবা সূত্র প্রতিপাদনের প্রতি উত্সাহিত করা উচিত। নয়তো ভুলে যাওয়া কবিতার লাইনের মতোই এক সময় এই মৌলিক বিষয়ের জ্ঞানও মস্তিস্ক থেকে হারিয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022709369659424