অটিস্টিক শিশুদের স্কুলে নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার বাড্ডায় অটিস্টিক শিশুদের জন্য পরিচালিত একটি স্কুলে কাউন্সেলিং ও থেরাপি চলার সময় অযত্ন ও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

এ কারণে শিশুদের সার্বিক পাঠদান ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়াসহ ১৫ দফা দাবি জানালে কর্তৃপক্ষ বিনা নোটিসে বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ রাখে বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।

তবে আফতাবনগরের স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিভাবকরা ‘খারাপ ব্যবহার’ করায় তাদের শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যান। এ কারণে বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য হন তারা। রোববার থেকে আবার স্কুল খোলা হবে।

শুক্রবার সকাল ১০টায় আফতাবনগরের ওই স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০ জন অভিভাবক সেখানে জড়ো হয়েছেন।

তারা জানান, ‘এক শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক’ সুবিধা পেতে তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ করে তারা ছেলে-মেয়েদের এ স্কুলে ভর্তি করলেও প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা বজায় থাকছে না। এসব দাবির কথা জানিয়ে বুধবার তারা লিখিত অভিযোগ দিলে বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়।

অভিভাবকদের একজন রাগিব আহসান মুন্না বলেন, “কোনো নোটিস ছাড়াই বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে আসলেও তারা ঢুকতে দেয়নি। উল্টো শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।”

রাশেদা আজাদ নীলার সন্তান চার বছর ধরে এ স্কুলে পড়ছে। বাড্ডা থেকে তিন বছর আগে স্কুলটি নতুন ঠিকানায় এলে তিনিও বাসা বদলে বনশ্রী এলাকায় আসেন।

তিনি বলেন, “স্কুলে আগে ছাত্র-ছাত্রী কম ছিল, অভিজ্ঞ শিক্ষকরাও ছিলেন। এখন শিক্ষার্থী ১১৪ জন, সে অনুযায়ী শিক্ষক নেই। এ কারণে বাচ্চাদের যেভাবে টেক-কেয়ার করার কথা সেভাবে হচ্ছে না। বাচ্চাদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে।”

নীলা বলেন, “আমরা চাই, স্কুলের নিচতলায় যেখানে প্যারেন্টস রুম ছিল, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিংয়ের ব্যাবস্থা হোক, যাতে আমরা বাচ্চাদের ঠিকমতো কেয়ার করা হচ্ছে কি-না দেখতে পারি। প্রয়োজনে তার খরচ আমরা বহন করতে রাজি আছি।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, “বাচ্চাদের শরীরে বিভিন্ন সময় দাগ পাই আমরা, কিন্তু তারাতো বলতে পারে না কীভাবে হল। আবার শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারাও মারধরের কথা অস্বীকার করে। বলে, বাসাতেই ওটা হয়েছে।”

অভিভাবকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ প্যারেন্টস ‍রুমে দোকান চালু করেছে, যেখানে অটিস্টিক ‘শিশুদের আরও বেশি হাইপার করার মতো’ পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে ১৫ দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে রোববার সকালে আবার স্কুল প্রাঙ্গণে সমবেত হবেন বলে অভিভাবকরা জানান।

টানা ৩-৪ দিন স্কুল বন্ধ না রাখা, ‘স্ট্যামিনা ধরে রাখার স্বার্থে’ একজন শিক্ষককে দিয়ে দুই শিফটে ক্লাস না নেওয়া, সুস্থ কোনো বাচ্চা যে অবস্থায় আসুক না কেন, তাকে স্কুলে গ্রহণ করা, বিশেষ শিশু হওয়ায় স্কুল পোশাকে না এলেও তাকে বের করে না দেওয়া এবং স্কুলের নিচতলায় বানানো দোকান বন্ধ করে দেওয়ার দাবি রয়েছে তাদের ১৫ দফার মধ্যে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা ফখরুদ্দিন আহমেদ  বলেন, “অভিভাবকদের দাবিগুলো নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে বলেছি। সবাই জড়ো হয়ে মোবাইলের লাউড স্পিকারেও সেটা শুনেছে। রোববার থেকে স্কুল চালু হবে।”

তবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় শিশুদের কাউন্সেলিং ও শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়ার দাবির বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন তিনি।

“একেক শিশুকে একেক রকম থেরাপি দিতে হয়।এভাবে মনিটরে দেখালে অভিভাবকদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। সে কারণে কোথাও মনিটরিং করার এমন ব্যবস্থা রাখা হয় না।”

এর আগে এক শিক্ষক একটি শিশুকে মারধর করায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও মোস্তফা ফখরুদ্দিন জানান।

অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলটিতে প্রভাতী শাখায় মাসে ১২ হাজার, দিবা শাখায় ছয় হাজার এবং উভয় শাখা একসঙ্গে হলে ১৮ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। আবার প্রতিবার পুনর্ভতির ফি নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা করে। এর বাইরে থেরাপির জন্য মাসে ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়।

এ বিষয়ে স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, “এক বাচ্চার বিপরীতে ৬ থেকে ১৮ হাজার নিই আমরা। কিন্তু একজন শিক্ষককে বেতন দিতে হয়। সেটা বাচ্চার বেতনের সমান হলেতো শিক্ষক পাব না। তার উপরে স্কুলের বাড়ি-ভাড়া, অধ্যক্ষসহ কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। এ কারণে ১১৪ জন শিক্ষকের বিপরীতে ৬০ জন শিক্ষক আছেন।”

তবে ‘তাদের অনেকে দুই শিফটে পড়ান’ বলে ‘এক শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক’ ব্যবস্থাই চালু রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01137900352478