দৈনিক শিক্ষাডটকম জরিপঅটোপাস চান না ৮৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

মুষ্টিমেয় পরীক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে এবারের এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অধিকাংশ পরীক্ষার্থী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। মিশনারি পরিচালিত দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নটরডেম কলেজের এইএসএসসি পরিক্ষার্থীরা এরইমধ্যে বিবৃতিতে দিয়ে পরীক্ষায় বসার পক্ষে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ করছেন ক্ষোভ ও উষ্মা। সমালোচনাকারীদের সাফ কথা, এটা অটোপাস। খারাপ নজির। এতে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হবে। যেসব পরীক্ষার্থী প্রকৃত বিষয়টি বুঝবেন, তারা হয়তো পরীক্ষায় বসার দাবিতে মাঠে নেমে যাবেন। 

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের পর পরিচালিত এক তাৎক্ষণিক জরিপেও অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর অসন্তোষের বিষয়টি উঠেছে। দেশের শিক্ষা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিচালিত জরিপটিতে প্রশ্ন রাখা হয়- অটোপাস সমর্থন করেন কি না। উত্তরে ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা না ভোট দিয়ে অটোপাসের বিপক্ষে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেন। আর মাত্র ১০ শতাংশ ভোট দেন অটোপাসের পক্ষে। অবশিষ্ট ৪ শতাংশ পরিক্ষার্থী কোনো মন্তব্য করেননি। 

পরীক্ষা দিতে না চাওয়া পরিক্ষার্থীরা অটোপাস শব্দটিকে পছন্দ না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণআড্ডাগুলোতে এটিতে অটোপাসই বলা হচ্ছে।  

এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি পরীক্ষা বাকি ছিল। ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়নি। এরই মধ্যে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যদিও সেটা হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দিন বিভিন্ন এলাকায় থানায় হামলা হয়েছিল। এতে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ১১ আগস্টের পরিবর্তে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

কিন্তু আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের দাবি ছিল, অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে হবে। এ দাবিতে গত সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেছিলেন পরীক্ষার্থীরা। এরপর দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে হাজার খানেক পরিক্ষার্থী সচিবালয়ের পূর্ব দিকের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন তাঁরা। 

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’, ‘দাবি মোদের একটাই, পরীক্ষা বাতিল’, ‘পরীক্ষা না বিকল্প, বিকল্প বিকল্প’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। তার আগে দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ কোনো বিষয়ে আগে যদি আটটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো, সেখানে চারটির উত্তর দিলে হবে। এ ছাড়া সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী, পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্ত মানেননি। তাঁরা দাবি পূরণে এক ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। বিকেল চারটার দিকে সচিবালয়ের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উঠে যান। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের দপ্তর ঘেরাওসহ এখানে-সেখানে অবস্থান নেন। এ পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের দপ্তরের সামনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতিও। তপন কুমার সরকার বলেন, স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। এখন ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে, তা পরে ঠিক করা হবে।

পরে ওই দিনই এভাবে সম্পূর্ণ পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহও সমর্থন করেন না বলে গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া দেন। ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ পরীক্ষা বাতিলের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও মানসিক স্বস্তির জন্য আরেকটু বেশি সময় দিয়ে যেকোনোভাবে হোক পরীক্ষা নিলে আদতে শিক্ষার্থীদের ভালো হবে। 
নটর ডেম কলেজের সাধারণ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে দেওয়া একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে তাঁরা বলছেন, এইচএসসির ফলাফল শুধু এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত। মোট কথা, তাঁদের অবস্থানটি পরীক্ষার পক্ষে। তবে তাঁরা বলছেন, শুধু আহত (ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত) শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাঁদের বিষয় ‘ম্যাপিং’ কিংবা ‘অটোপাস’, আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবশিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নই এই সমস্যার সমাধান বলে তাঁরা মনে করছেন।

যদিও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের যুক্তি হলো, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাঁদের মানসিক চাপে ফেলেছে। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় তাঁরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না। তাই তাঁরা ইতোমধ্যে হওয়া পরীক্ষা এবং স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের পক্ষে তাঁরা।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় সবাই পাস করেন। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053689479827881