দুদকে অভিযোগঅঢেল সম্পদের মালিক ইবি প্রক্টর জাহাঙ্গীর

ইবি প্রতিনিধি |

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ছাত্রীকে নিজ বিভাগে শিক্ষকের চাকরি দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ১১ জানুয়ারি কুষ্টিয়া দুদক কর্যালয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছেন তার বিরুদ্ধে হাউজিং বি-ব্লকের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি।

দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর হোসেনের কুষ্টিয়া শহরের নিশান মোড় হাউজিং ডি-ব্লক মসজিদের পূর্বদিকে সাড়ে তিন কাঠা জমির ওপর আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। যার মূল্য জমিসহ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই-ব্লকের ১নং প্লটে সাততলা বিল্ডিংয়ে ১টি ফ্লোর রয়েছে তার নামে, যা বর্তমানে ভাড়া দেওয়া আছে। এ ফ্লোরটির মূল্য কমপক্ষে ৮০ লাখ টাকা। ঢাকার মিরপুরে নিজ নামে একটি ফ্ল্যাট আছে, যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা। ঢাকার বনশ্রীতে নিজ নামে দুটি ফ্ল্যাট নির্মাণাধীন, যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। তার নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গার আলমাডাঙ্গা উপজেলায় নিজ গ্রামে একটি দোতলা বাড়ি আছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতালের পাশে নিজ নামে চারতলা বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়াও নিজে ব্যবহারের জন্য দুটি প্রাইভেট কার আছে, যার একটি কুষ্টিয়ায় এবং অন্যটি ঢাকায় ব্যবহার করা হয়। গাড়ি দুটির আনুমানিক মূল্য ৬০ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি নিজ নামে এবং স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা গচ্ছিত আছে বলেও অভিযোগে তুলে ধরা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বলেন, ‘ইবির প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গোপনীয়। যাচাই-বাছাই শেষে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জাহাঙ্গীর আলম আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য করে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আÍসাৎ করেন। আগে নিজ বিভাগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন এবং বিষয়টি নিয়ে সেসময় নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস হলে সারা দেশে এ নিয়ে তোলপাড় হয়। ওই সময় সংবাদটি জাতীয় দৈনিক ও টিভিতে প্রচার হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্ত করে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালীন কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ হয় বিভাগে। সেই সময় একটি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। এ বিভাগের এক ছাত্রী প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করেন। সেই ছাত্রীকে চাকরি দেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। একই সঙ্গে আগে থেকে প্রশ্ন জানিয়ে দেয়া হয়। পরে ওই ছাত্রীর চাকরি হয়। বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করছেন ইবিতে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। একদিন পরেই সিন্ডিকেটে চাকরির অনুমোদন করানো হয়। সে সময়কার ৪ মিনিটের একটি ফোনালাপ হাতে আছে। তাতে চাকরি পাওয়া ওই ছাত্রীর সঙ্গে কোনো এক ব্যক্তির কথোপকথন রয়েছে। তবে অপর প্রান্তের ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি।

চাকরি পাওয়া ওই ছাত্রী এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন। তাতে জাহাঙ্গীর আলম স্যারকে কীভাবে অর্থ দিতে হবে, কত টাকা দিতে হবে, এর বর্ণনা রয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন আসে, তা আগে থেকেই জানিয়ে দেয়ার কথাও আছে সেই ফোনালাপে। নেতাদের ম্যানেজ করার কথা বলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে তিনি প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প চলমান, যা থেকে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে সমন্বয় করে টেন্ডার থেকে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে কুষ্টিয়া, ঢাকা ও নিজ জেলায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কুষ্টিয়া শহরের নিশান মোড় হাউজিং ডি-ব্লকে ৩.৫ কাঠা জমির ওপর যে বাড়ি আছে, সেটি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে জমি কেনা এবং ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাড়ি করা। সেই বাড়ি আমার স্ত্রীর নামে। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আর চাকরি দেয়ার বিষয়ে কথা হলে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আব্দুস সালাম বলেন, দুদকে অভিযোগের বিষয়টি তার ব্যক্তিগত। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয় নয়, এখানকার কোনো বিষয় থাকলে খতিয়ে দেখা হবে প্রয়োজনে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002769947052002