অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের নামে ১০ শতাংশ চাঁদা কর্তন বন্ধ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস দেয়াসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে আজ বুধবার (২৪ জুলাই) প্রতিটি জেলা শহরে এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে 'প্রতীকী অনশন' পালন করছেন শিক্ষকরা।
একই দাবিতে আওয়ামী লীগমনস্ক হিসেবে পরিচিত সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে আগামী ২৮ জুলাই (রোববার) সকালে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের অফিস ঘেরাও করবেন তাঁরা। প্রতীকী অনশনে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের দুই সদস্য সচিবের পদত্যাগও দাবি করেছেন শিক্ষক নেতারা।
বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী শেখের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক নেতারা। প্রতীকী অনশনের শুরুতে দাবির পক্ষে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নেতারা।
এসময় বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের নামে ১০ শতাংশ চাঁদা কর্তন বন্ধ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস দেয়াসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে আজ প্রতীকী অনশন পালন করছেন বিটিএ নেতারা। একই দাবিতে আগামী ২৮ জুলাই অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের অফিস ঘেরাও করা হবে। এরপরেও দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিটিএ নেতারা।
তিনি আরও বলেন, অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্টের দুইজন সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু এবং অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদীর প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরে। তারা ঢাকায় অফিস করেন। এ কারণে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে সৃষ্ট জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষকদের। তাই, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের দুই সদস্য সচিবের পদত্যাগ দাবি করছি।
বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী শেখ বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ। সরকার যখন এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল তখন কিছু সুবিধাভোগী শিক্ষক নেতা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কর্তনের জন্য ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে পৃথক দু’টি অযৌক্তিক ও অমানবিক গেজেট প্রকাশ করায়। যা পরবর্তী সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে স্থগিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পরে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ১০ শতাংশ কর্তনের জন্য পুনরায় একটি আদেশ জারি করা হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিবাদে শিক্ষা সচিব ভুল স্বীকার করে উক্ত আদেশটিও প্রত্যাহার করে নেন। এরপর গত ৯ জানুয়ারি অবসর সুবিধা বোর্ডের সভায় উপস্থিত সদস্যদের সামনে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন না করার অভিমত পূনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
কিন্তু গত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচরীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশ চাঁদা কর্তনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিত আদেশ প্রদান করা হয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস থেকে শিক্ষকদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ চাঁদা বাবদ কেটে রাখা হচ্ছে। এ আদেশের ফলে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
তাই মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদানসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কর্তনের প্রজ্ঞাপনটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
প্রতীকী অনশনে শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা অবদান রাখছেন। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি সরকারি কর্মচারীদের মত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা এবং বাড়ীভাড়া প্রদান করতে হবে। আর আমাদের বিশ্বাস ঈদের আগেই এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা এবং বাড়ি ভাড়া প্রদানের ঘোষণা আসবে।
প্রতীকী অনশনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিটিএর সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সহ-সভাপতি আলী আজগর হাওলাদার, বেগম নুরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মোস্তফা জামান খান, দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, গ্রন্থাগার বিষয়ক সম্পাদক অশোক কান্তি গুহ, কেন্দ্রীয় সদস্য আজম আলী খান, প্রবীর রঞ্জন, মনোরঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।