অতিরিক্ত ক্লাসের নামে চলছে প্রাইভেট বাণিজ্য

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি |

শিবালয় উপজেলার নয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে চলছে প্রাইভেট বাণিজ্য। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাসের নামে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, বিদ্যালয়ের ক্লাস নিয়মিত না করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়া বাধ্যতামূলক। তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে স্কুল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায় না। প্রতি বিষয়ের জন্য ২৪ দিনে শিক্ষকদের ৩০০ টাকা দিতে হয়।

  

সরজমিন নয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, পবিত্র রমজান মাসে স্কুল বন্ধের সময়ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি ব্যাচে ৩৫ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে তড়িঘড়ি শিক্ষার্থীদের বের করে দেন সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অকপটে স্বীকার করে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক হামিদুল তাদের প্রাইভেট পড়ান। 

সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও একইভাবে বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ানোর দৃশ্য দেখা যায়। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজি প্রাইভেট পড়ানো সহকারী শিক্ষক তোরাব আলী বলে, আমরা প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে এবং পরিপত্র মেনে স্কুল বন্ধের সময় অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছি। দশম শ্রেণি বাদে অন্যান্য শ্রেণির অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার বিধান আছে কিনা এবং বিদ্যালয় বন্ধের সময় অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারেন কিনা- এ প্রশ্নে তিনি মনগড়া উত্তর দেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তফসের উদ্দিন বিএসসি বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের লিখিত অনুমতি নিয়ে ২৪ দিনে প্রতি বিষয়ে ৩০০ টাকা হারে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছি। এই টাকার ১০ শতাংশ বিদ্যালয় ফান্ডে জমা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই শিক্ষক বিদ্যালয় ফান্ডে টাকা জমা দেয়ার রসিদ এবং অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার অনুমতিপত্র সাংবাদিকদের দেখাতে পারেননি। 

  

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, সরকারি পরিপত্র অনুসারে বিদ্যালয় ছুটির আগে-পরে বা বন্ধের সময় অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার বিধান রয়েছে। আমরা নিয়ম মেনেই বন্ধের সময় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নিচ্ছি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

বিদ্যালয়ের সভাপতি লাবলী আক্তার বলেন, অভিভাবকদের অনুরোধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং আমি অতিরিক্ত ক্লাস নিতে শিক্ষকদের অনুমতি দিয়েছি। অনুমতিপত্রের অনুলিপি দেখতে চাইলে তিনি জানান, লিখিত নয় মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে।

শিবালয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানান, বিদ্যালয় বন্ধকালীন সময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি তদন্ত করে ইউএনওকে অবহিত করব। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

শিবালয় উপজেলা শিক্ষা নীতিমালা মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহিদুর রহমান জানান, কোনো বিদ্যালয়ে নীতিমালাবহির্ভূত কোনো কাজ হলে মাধ্যমিক কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে - dainik shiksha সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ - dainik shiksha মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষায় বন্যার ক্ষত, চিন্তিত অভিভাবকরা - dainik shiksha শিক্ষায় বন্যার ক্ষত, চিন্তিত অভিভাবকরা শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046181678771973