অতিরিক্ত পাঠ্যবই কার স্বার্থে?

মো: নাসির উদ্দীন |

রুদ্র (ছদ্ম নাম)। ঢাকা তথা বাংলাদেশের বিখ্যাত ১০টি সেরা বিদ্যালয়ের একটিতে বাংলা মাধ্যমে প্রথম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক English for today- class 1, আমার বাংলা বই ও প্রাথমিক গণিত-  প্রথম শ্রেণি শিরোনামে মোট ৩টি বই সরকারিভাবে তাকে বিনামূল্যে স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।
 
কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ Cambridge Connection English Coursebook 1, Cambridge Connection English Wordbook 1, Oxford  এর The New Grammar Tree, ছোটদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ছোটদের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, নিজে নিজে লেখা  শেখো, Samia's Spelling & Handwriting book -1 ও এসো ছবি আঁকি রঙ করি শিরোনামে মোট ৮টি বই এর তালিকা নির্দিষ্ট দোকান থেকে ক্রয়ের লক্ষ্যে তাকে সরবরাহ করা হয়েছে।

এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে জাতীয় কারিকুলামে মাত্র ৩টি বই আছে, কিন্তু অতিরিক্ত ৮টি বই কেন? কি প্রয়োজন? কেন প্রয়োজন? কেন অতিরিক্ত অর্থ খরচ? কার স্বার্থে? সে স্বার্থ কি ছাত্রের? নাকি সরকারের, নাকি স্কুল কর্তৃপক্ষের, নাকি স্কুল শিক্ষকের, নাকি সুবিধাভোগী তৃতীয় কোনো পক্ষের?

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতার সুযোগে এবং বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট কারিকুলাম না থাকায়, শিক্ষা সেবা না হয়ে ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে, যা বর্তমানে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে শ্রেণিকক্ষে পড়াশুনা না হওয়ায়, ব্যাঙের ছাতার মতো আনাচে কানাচে গড়ে উঠছে কোচিং সেন্টার। কিছু শ্রেণিশিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে, কোচিং সেন্টার বা বাসায় ব্যাচে পড়াতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর সে কারণেই দিন দিন লেখা পড়া হচ্ছে কোচিং নির্ভর বা পরীক্ষা নির্ভর। 
 
শিশুরা শ্রেণিকক্ষে কী শিখল, তার ওপর শিক্ষকরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। শুধু অপ্রয়োজনীয় ও দীর্ঘ সিলেবাস দিয়েই শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে পড়াশুনা সীমাবদ্ধ রাখছেন। বিশ্বব্যাংকের  প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ বছরের একটি শিশু মাত্র সাড়ে ৬ বছরের পাঠ্যক্রমের সমান শিক্ষালাভ করছে অর্থাৎ শিশুদের অধিক পড়ার চাপ ও নিম্নমানের পাঠদান এর অন্যতম কারণ। ফলস্বরূপ শিশু হারাচ্ছে তার সৃজনশীলতা, হারাচ্ছে পড়ার আগ্রহ।
 
শিশু শিক্ষা যেখানে আনন্দমুখর হওয়ার কথা, সেখানে বর্তমানে শিশুদের কাছে শিক্ষা হচ্ছে ভীতিকর। বলা হয়ে থাকে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এবং ‘শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ’। তাই জাতির মেরুদণ্ড সোজা করার লক্ষ্যে গ্রাম কিংবা শহরের সকল প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সরকারি/বেসরকারি)-এর জন্য একটি ইউনিক প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলাম অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তাতে বন্ধ হবে কোচিং বাণিজ্য, বন্ধ হবে তৃতীয় কোনো পক্ষের আয় বা ব্যবসা।
 
আমরা কি একটি ইউনিক কারিকুলাম করতে পারি না? এটা কি এতটাই কঠিন কাজ? স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরেও আমরা এ কাজটি করতে পারিনি, ভাবতেই অবাক লাগে!

আর কত! তৃতীয় পক্ষকে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই। আর তা না হলে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে শিশু, বিনষ্ট হবে একটি জাতির ভবিষ্যৎ।
 
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033328533172607