অতিরিক্ত বেতন ও এমপিওতে ৬ দুর্নীতি: ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অবৈধভাবে নেয়া বেতন-ভাতা ফেরত এবং এমপিও সংক্রান্ত ছয় অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এক মাসের চূড়ান্ত আলটিমেটাম দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্দেশনা মতো পদক্ষেপ না নিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার এ আদেশ জারি করে অধিদপ্তর।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া মাউশি অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, কেউ একাধিক ইনডেক্সে (মাসে অন্তত দুটি) বেতন-ভাতা নিয়ে থাকলে, তা বন্ধে প্রতিষ্ঠানের সভাপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ অনলাইনে আবেদন করবেন। অবসরে বা মারা গেছেন- এমন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন শিটে নাম থাকলে তা কাটা। এজন্য মাউশিতে লিখিতভাবে জানানো। যদি কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী অবৈধভাবে অতিরিক্ত বেতনের জন্য এমপিও শিটে তালিকাভুক্ত থাকেন এবং তিনি বাড়তি বেতন না নিয়ে থাকেন, তাহলে তা সংশোধন করা। সংশোধনের লক্ষ্যে বিষয়টি সরকারকে জানানোর দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধানের। আর এমন শিক্ষক বা কর্মচারী যদি অতিরিক্ত অর্থ নিয়েই থাকেন তাহলে তা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ফেরতের ব্যবস্থা করা। নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেতন স্কেলের ৭ম গ্রেডে বেতন পেতে পারেন না। যদি কোনো শিক্ষক এ ধরনের গ্রেডের জন্য তালিকাভুক্ত হয়ে থাকেন এবং বেতন না নিয়ে থাকেন তাহলে নাম কাটাতে চিঠি দেয়া। বেতন নিয়ে থাকলে তা ট্রেজারি চালানে ফেরত দেয়া।

জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত বেতন নেয়ার ঘটনা অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে। এর বাইরে এমন আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সরকারি অর্থ লোপাট বন্ধে প্রতিষ্ঠান সভাপতি ও প্রধানের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।

উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যদি সংশ্লিষ্টরা আমাদের সহায়তা না করেন তাহলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এর আগে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া শিক্ষকদের তা ফেরত দিতে একদফা বলা হয়েছে। তখন অনেকেই বাড়তি নেয়া অর্থ ফেরত দেননি। তারা হয়তো মনে করছেন, তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। কিন্তু প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানে আমরা সবাইকে চিহ্নিত করেছি। সব তথ্যপ্রমাণ হস্তগত হয়েছে। অর্থ ফেরত দিতে অভিযুক্তদের এ চূড়ান্ত আলটিমেটাম দেয়া হল।

মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিলে স্বাক্ষর করে থাকেন প্রতিষ্ঠান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ। তাদের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক থেকে বেতন তোলা যায় না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিধিবহির্ভূতভাবে এমপিওভুক্তি, বেতন কোড কিংবা জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এরপর জালিয়াতি করে বেশি বেতন নেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে আদেশ জারি করা হয়। তাতে এ ধরনের অপরাধে জড়িত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিলে স্বাক্ষর না করতে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতিদের অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি তখন ১৫ অক্টোবরের (২০১৫) মধ্যে বাড়তি নেয়া ফি ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রাহ্য করেনি।

মাউশি উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ২০১৫ খ্রিস্টোব্দের ওই নির্দেশনায় অর্থ ফেরত না দিলে এমপিও নীতিমালার ১৭(৩) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা ছিল। এবার ওই ধারার পাশাপাশি আমরা ১৮(১) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছি। এ দুই ধারা অনুযায়ী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও গভর্নিং বডির প্রধান এবং প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। ব্যবস্থার মধ্যে সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগে মামলা করা যাবে। আর ১৮(১) ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এমপিও কেড়ে নেয়া যাবে।

এমপিও জালিয়াতি নিয়ে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে ইএমআইএস সেলের সাইফুরসহ কয়েকজন ধরা পড়ে, চিহ্নিত হয় এমপিও দালালচক্র। এরই ধারাবাহিকতায় মাউশি অধিদপ্তরে এই চিঠি পাঠান বলে জানা যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047481060028076