অধিকাংশ বেসরকারি পলিটেকনিক মানহীন

নিজামুল হক |

দেশে এখন অযোগ্য ও মানহীন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। ৪৬৭ বেসরকারি পলিটেকনিকের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আছে প্রায় ৭০টি, যার অধিকাংশই মানহীন। আরো দুরবস্থা ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ান, তাদের যোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এ কারণে বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার দ্বিগুণের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসাবে সরকারি পলিটেকনিকগুলোতে আসন সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। পাশাপাশি দেশের ৬৪টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে পলিটেকনিক কলেজে উন্নীত করা হয়। কিন্তু অন্ধকারে থাকা বেসরকারি পলিটেকনিকগুলো নিয়ে সবাই উদাসীন।

মানের দিকে নজর নেই, শুধুই ব্যবসা। যার অংশীদার বোর্ডের কর্মকর্তারও। কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রতিমাসে বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে টাকা নেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই শিক্ষা বোর্ড চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল, ডিপ্লোমা ইন ফিসারিজ, ডিপ্লোমা ইন জুট টেকনোলজি কোর্স, তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি, ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি, ২ বছর মেয়াদী দাখিল, ভোকেশনাল কোর্স অনুমোদন দিয়ে থাকে।

কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখে বের হয় তার কোনো খোঁজ খবর রাখে না কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য রয়েছে একটি নীতিমালা। ২০০৯ সালে প্রণীত এ নীতিমালা সংশোধন হয় ২০১২ সালে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার কী কী বাস্তবায়ন করছে তা জানেন না বোর্ড কর্মকর্তারাও। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

আবার এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত তদারকির দায়িত্বও বোর্ডের। কিন্তু তদারকির মধ্যে নেই বোর্ড। যার ওপর পরিদর্শনের প্রধান দায়িত্ব তিনি হলেন বোর্ডের পরিদর্শক আবদুল কুদ্দুস সরদার। তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। সব কিছু এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। তবে কারিগরি শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।

তিনি স্বীকার করেন, নীতিমালার ৫০-৬০ ভাগ মানলেই প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া যায়। আমিও তা-ই দেখেছি। আর বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি গাজীপুরে একটি পলিটেকনিকে গিয়েছিলাম। খুবই খারাপ অবস্থা। এভাবে চলতে পারে না। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে নিজ উদ্যোগে ভালো হয় সে কারণে এ, বি, সি-এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে।

বোর্ড থেকে বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোকে ২০১৩ সালের মধ্যে নিজস্ব ভবনে যাওয়ার নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অথচ এখন বোর্ডও এ বিষয়ে নীরব।

যে কারণে অযোগ্য ও মানহীন : এই প্রতিবেদক রাজধানীর একাধিক পলিটেকনিক ঘুরে দুরবস্থার চিত্র দেখতে পান। পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা নেই, নেই শিক্ষা উপকরণ এবং প্রশিক্ষক। কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সের কার্যক্রম।

চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের শেখার সুযোগ কম। তবে নির্দিষ্ট সময় পেরুলেই তারা পাস করে যাচ্ছে, পাচ্ছে সার্টিফিকেট। কিন্তু বাস্তবে এই সার্টিফিকেট নিয়ে অনেকেই চাকরির জন্য দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছে না।

প্রগতি স্মরণীর আলফা ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সিভিল এবং ইলেকট্রিক্যালের ওপর চার বছরের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর অনুমোদন পেয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ১০টি এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ৬টি পৃথক ল্যাব থাকার কথা।

কিন্তু সব মিলে প্রতিষ্ঠানের ল্যাব আছে মাত্র ২টি। প্রতিষ্ঠানের মালিক পরিচয়ে আল আমিন বলেন, দুটি বিষয়ের জন্য দুটি ল্যাব থাকলেই চলে। নীতিমালার ২০ ভাগ পূরণ না করার পরও এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে কীভাবে অনুমোদন পেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি জানান, পাশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ডিগ্রিধারীরা এখানে পড়ান

আর নতুন শর্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কবে যেতে পারবে বা আদৌ পারবে কীনা তা নিয়ে সন্দিহান মালিক নিজেই।

স্মার্ট কম্পিউটার অ্যান্ড টেকনোলজি। এ প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ৫টি টেকনোলজির ওপর চার বছর মেয়াদী কোর্স রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ২০টি ল্যাবরেটরি থাকার কথা। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের ভালো মানের ৫টি ল্যাবরেটরিও নেই। যে ল্যাবরেটরি রয়েছে তাতে পর্যাপ্ত উপকরণও নেই।

ভাসানটেকে অবস্থিত আনোয়ার পলিটেকনিট ইনস্টিটিউট। ৬ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স। ল্যাবও রয়েছে তিনটি, শর্ত অনুযায়ী ২৫ ভাগও পূরণ হয় না। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদনই পাওয়ার কথা নয়।

প্রতিষ্ঠানটির কেন এই দুরবস্থা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ছাত্র পাই না। কিভাবে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করবো। তিনি জানান, সরকার সহায়ক হিসাবে কাজ করছে না।

রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির ৪টি বিষয়ের ওপর চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালানোর অনুমোদন রয়েছে। ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের স্টেপ প্রকল্প থেকে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দেওয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ৩০ ভাগ নিয়মও পূরণ করা হচ্ছে না। কিভাবে কোনো যোগ্যতায় এ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর - dainik shiksha ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024259090423584