শিক্ষকদের কোচিং : অধিদপ্তরের ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত মন্ত্রণালয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সারা দেশের স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্লাস চললেও প্রাইভেট-কোচিংই শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা। এমনকি বেশির ভাগ শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিংয়েই বেশি মন দেন। শিক্ষার্থীদেরও কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করেন। অথচ দেশের ৯টি আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকরা খুব একটা প্রাইভেট-কোচিং করান না। এটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আর মাউশি অধিদপ্তরও ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি সভা আহ্বান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সভায় শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যের তথ্য তুলে ধরতে বলা হয় মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। তিনি ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সভায় জানান, শিক্ষকরা নীতিমালার মধ্যেই থাকছেন। এখন তাঁরা আর তেমনভাবে প্রাইভেট-কোচিং পড়ান না।

নীতিমালায় বলা আছে, একজন শিক্ষক তাঁর প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষার্থীকে পড়াতে পারবেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

মাউশির চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হোসনে আরা বেগম তাঁর প্রতিবেদনে জানান, এই অঞ্চলের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একই তথ্য দেন কুমিল্লা অঞ্চলের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার। বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক জানান, তাঁর জানামতে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না।

সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ জানান, নীতিমালা জারির পর বেশির ভাগ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করছেন না। খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক নিভা রাণী পাঠক জানান, নীতিমালা জারির পর শিক্ষকদের কোচিং অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে অনেক শিক্ষক নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিং করাচ্ছেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক আবু নূর মো. আনিসুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিবেদনে জানান, শিক্ষকরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছেন।

বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারেও শিক্ষকরা ক্লাস নেন না। তবে প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত ক্লাসে অনেক সময় বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান, প্রাইভেট-কোচিং অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। শিক্ষকরা নিয়মের মধ্যে এসেছেন। ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস প্রতিবেদনে জানান, মনিটরিং টিম নিয়মিত নীতিমালার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল ফজল বলেন, ‘আমার ছেলে স্কুলের দুজন টিচারের কাছে পড়ছে। এ ছাড়া বাইরের আরো একটি কোচিং সেন্টারেও পড়ছে। এর পরও যদি বলা হয়, প্রাইভেট-কোচিং নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তা একেবারেই হাস্যকর।’

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘এক দিনের মধ্যে আমার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সে সময় কোনো অভিযোগও ছিল না।’ সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহম্মদ বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। তবে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা সেভাবেই প্রতিবেদন দিয়েছি।’

এসব বিষয়ে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক প্রফেসর সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্য নিয়ে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সে আলোকে আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে সেটা ঠিক নয়, তবে আমি মনে করি, কোচিং বাণিজ্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035309791564941