নুসরাত হত্যাচেষ্টাঅধ্যক্ষের নির্দেশেই হত্যার পরিকল্পনা করে নুরুদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদরাসার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুদ্দিন। হত্যার নির্দেশ দেন মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা। ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে  নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা নারী নির্যাতন দমন আইনের মামলা ও বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়। কিন্তু ভয়ভীতির মুখেও নুসরাত মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাগ্যক্রমে নুসরাত বেঁচে যায়। নুরুদ্দিনকে গ্রেফতার করতে পারলে হত্যা পরিকল্পনাসহ সবকিছু জানতে পারবে পুলিশ-এমনটা দাবি করছেন নুসরাতের পরিবার।

নুসরাতের ভাই নোমান জানিয়েছেন, যেদিন তার বোনের শরীরে আগুন দেওয়া হয় সেদিন হাসপাতালে নেয়ার সময় নুসরাত তাকে সবকিছু জানিয়েছে।

এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তর নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, তারা যেসব তথ্য উপাত্ত পেয়েছে তাতে এই হত্যার চেষ্টা পরিকল্পিত বলে প্রমাণ পেয়েছে। হত্যাচেষ্টায় নুরুদ্দিন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত বলেও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারী নুরুদ্দিনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন।

নুসরাতের ভাই নোমান জানান, নোমান ওই মাদরাসা থেকে এবার ফাজিল পরীক্ষা দিয়েছে। ওই মাদরাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুদ্দিন। নুরুদ্দিনের সঙ্গে অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা’র গভীর সর্ম্পক রয়েছে।

নোমান আরও বলেন, গত ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে। নুরুদ্দিন অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলার মুক্তির দাবিতে মিছিল মিটিং করে। পরে মামলা থেকে অধ্যক্ষকে বাঁচাতে অধ্যক্ষের নির্দেশে নুরদ্দিন এ হত্যা পরিকল্পনা করে।

নোমান বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর বোনের নিরাপত্তার স্বার্থে মাদরাসায় আনা নেওয়া করেন। ঘটনার আগের দুইটি পরীক্ষার সময়ও তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে তার বোনকে বসিয়ে দিয়ে এসেছেন। তবে ঘটনার দিন তিনি তার বোনকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে মাদরাসার অফিস সহকারী মোস্তফা তাকে ঢুকতে দেননি। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বোন পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার পর একটা সময় তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

নোমান জানান, ছাদে যাওয়ার পর নেকাব, বোরকা, হাতমোজা পরা চারজন নুসরাতকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অসত্য এ কথা বলতে চাপ দেন। তখন নুসরাত এতে অস্বীকৃতি জানালে ওই চারজন ওড়না দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেন। তার গায়ে তারা কিছু একটা ছুঁড়ে দেন। তারপর শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ওই চারজন নুসরাতকে বলেন ‘যা এবার পালা।’ গায়ে আগুন লাগা অবস্থাতেই নুসরাত দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। চারজনের কেউ কারো নাম উচ্চারণ না করলেও কোনো একপর্যায়ে একজন শম্পা বলে একজনকে ডাকেন। তবে তাদের সবার মুখ ঢাকা থাকায় কাউকে চিনতে পারেননি নুসরাত। এক পর্যায়ে হাত বাঁধা ওড়নাটি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর নুসরাতের হাতের বাঁধন খুলে যায়। তখন নুসরাতের চিত্কার শুনে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের এক কনস্টেবল রাসেল ও মাদরাসার সেই অফিস সহকারী মোস্তফা সেখানে ছুটে যান। পরে তারা নুসরাতকে অন্য কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরেন এতে আগুন নিভে যায়।

নোমান আরো বলেন, ঘটনার সময় ওই মাদরাসা থেকে কেউ বের হয়নি। কারণ হত্যার চেষ্টাকারী সকলেই ওই মাদরাসার শিক্ষার্থী। নোমান বলেন, নুরুদ্দিনকে গ্রেফতার করলে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টার সব তথ্য বের হয়ে আসবে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করতে পারলে পুলিশ এ হত্যা চেষ্টার সকল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের সম্পর্কে তথ্যও পাবে।

এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এ মামলাটি পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারির নির্দেশে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003014087677002