অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্কুলে ডেকে নিয়ে বাবা-মাকে অপমান করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে সহপাঠীরা। এ সময় তারা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের পদত্যাগ দাবি করেন। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। স্কুলের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও বিক্ষোভে অংশ নেন।

তারা এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবি করেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকলের অভিযোগ তুলে বাবা-মাকে ডেকে অপমান ও টিসি দেয়ার কথা বলায় রাজধানীর শান্তিনগরে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি আত্মহত্যা করেন।

স্কুলের অধ্যক্ষ অরিত্রির বাবা-মাকে ডেকে মেয়ের সামনেই অপমান করে বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে অরিত্রিকে নকলের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হবে। এ অপমান সইতে না পেরে বাসায় এসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অরিত্রি। আত্মহত্যার কিছুক্ষণ আগে সে তার মাকে জানায়, ‘মা এ লজ্জা নিয়ে বাঁচতে চাই না।’ তার ছোট বোনও একই স্কুলে পড়ে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত সুবর্ণ বলে, আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। অধ্যক্ষের খামখেয়ালির কারণেই মরতে হয়েছে অরিত্রিকে, আমরা তার পদত্যাগ চাই। জাহানারা বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। স্কুল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থী যদি নকল করে থাকে, সে জন্য সে ক্ষমা চেয়েছে। পা ধরেও ক্ষমা চেয়েছে।

‘তারা তাকে মাফ না করে বরং তার বাবা-মাকে অপমান করেছে, তাকে টিসি (বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র) দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

জাহানারা বেগমের মেয়ে ভিকারুননিসা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ সাধারণভাবে নিতে পারত। আমরা এটিকে হত্যা বলতে চাই। জড়িতদের বিচার চাই।

আরও পড়ুন: ভিকারুননিসায় ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

অভিভাবকরা বলেন, এ স্কুলের শিক্ষকরা মানবিক না। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন। এমনকি কোনো প্রয়োজনে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা কিংবা কথা বলা যায় না। অধ্যক্ষ তাদের কোনো প্রয়োজনের কথা শুনতে চান না।

পুলিশ ও পরিবারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর শান্তিনগরে সাততলা ভবনের সপ্তম তলায় নিজ ফ্ল্যাটের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অরিত্রিকে পাওয়া যায়।

এর পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসকরা অরিত্রিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। অরিত্রির বাবা দিলীপ কুমার একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী।

অরিত্রির মা-বাবা জানান, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার স্কুলে পরীক্ষার সময় তার মেয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়েছিল। মোবাইল ফোনে নকল আছে-এমন অভিযোগে ওই স্কুলের শিক্ষক তাদের স্কুলে আসতে বলেন।

সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রির সঙ্গে তারা স্কুলে যান। পরে তাদের ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেলে তারা মেয়ের নকল করার ব্যাপারে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান।

কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের প্রিন্সিপালের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাতে সদয় হননি।

পরে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।

অরিত্রির মা-বাবার অভিযোগ, প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করায় তার মেয়ে দ্রুত বাসায় চলে যায়। পরে তারা গিয়ে দেখে অরিত্রি নিজ রুমে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047240257263184