অধ্যাপকের গায়ে কেরোসিন নেপথ্যে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভাগের শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টা করছিলেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের কয়েক শিক্ষককেও চাকরিচ্যুত করেন তিনি। পাশাপাশি ক্লাসে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকা কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারান। এ জন্য অধ্যাপক মাসুদের ওপর দোষ চাপান ওই শিক্ষার্থীরা।

মূলত এ দুটি কারণই এই শিক্ষকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এসবের বদলা নিতেই চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের প্ররোচনায় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারানো শিক্ষার্থীরা কেরোসিন ঢেলে অধ্যাপক মাসুদকে হত্যার চেষ্টা করে। চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা প্ররোচনা ও সাহস না দিলে এমন ঘটনা কখনও ঘটত না বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ সবাই। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামে সমালোচনার ঝড় বইছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের। 

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। একজন শিক্ষককের সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা কখনও কাম্য নয়। এটি গুরুতর অপরাধও বটে। জড়িতরা যাতে কেউ ছাড় না পায় সেজন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছি। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ফোন করে ইউএসটিসিতে সংঘটিত ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আমাদের টিম মাঠে কাজ শুরু করেছে। একজনকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব। 

ইউএসটিসির উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রটি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এর সঙ্গে আর কারা জড়িত তা দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, কিছু শিক্ষকের প্ররোচনায় পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থীরাই এতবড় ঘটনা ঘটিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অঞ্জন কুমার বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে কেরোসিন ঢেলেছে, তারা এর আগেও অধ্যাপক মাসুদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। তবে গত এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি এর কোনো প্রমাণই খুঁজে পায়নি। সে সময় ব্যর্থ হওয়ার পর কেরোসিন ঢেলে একপ্রকার হত্যার চেষ্টা চালায় ওই শিক্ষার্থীরাই।

অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ বলেন, শিক্ষকরাই যখন কিছু শিক্ষার্থীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কোনো শিক্ষকের মানহানি করতে চান, তখন আর কী বলব? এ ঘটনা যে পুরো শিক্ষক সমাজকে অপমানিত করা হবে, সেই বিষয়টি তারা একবারের জন্যও ভেবে দেখেননি। বিভাগের মান উন্নয়ন করতে চাওয়াই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল।

খুলশী থানার ওসি প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, কেরোসিন ঢেলে দেয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত ছাত্র মাহমুদুল হাসান। তার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। কেরোসিন দেয়ার পর হয়তো আগুন দেয়ার পরিকল্পনা ছিল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027601718902588