রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার আসামি মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতেই হচ্ছে। ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে নানা আইনি চেষ্টা করেছিলেন আসামিরা। কিন্তু সেসব প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্ট।
এসব আইনি প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছেন, আসামিকে আটক ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করার যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা তো আপিল ও রিভিউর রায়ে জবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরেও সেই একই বিষয়ে রিট করে বিষয়টিকে কেন রি-ওপেন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ৭১ এর বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) এ মন্তব্য করেন।
একইসঙ্গে আসামির আবেদনটিও খারিজ করে দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম।
রাবির শিক্ষক মিয়া মো.মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। তাদেরকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফাঁসি বহালের পর আসামি প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই আবেদনও খারিজ হয়েছে। কিন্তু ফাঁসি কার্যকরে কারাকর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ঠেকাতে করেছিলেন রিট। সেই রিটও খারিজ হয়েছে। সেই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে এবার গিয়েছেন আপিল বিভাগে। সেই আবেদনও খারিজ করা হয়েছে মঙ্গলবার।
আদালতে জাহাঙ্গীরের পক্ষে আইনজীবী এসএন গোস্বামী ও রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরসেদ শুনানি করেন।
মামলার বিবরণ, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ড. তাহের জীবিত থাকলে কখনোই পদোন্নতি পাবেন না-এমন ধারণা থেকেই ষড়যন্ত্র ও খুনীদের প্রলোভন দিয়ে তাকে খুন করান মিয়া মো. মহিউদ্দিন। এরপর তার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খুনিরা ড. তাহেরকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেন।
২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেয়। হাইকোর্ট ২০১৩ সালে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি বহাল রাখেন। সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয় নাজমুল ও সালামকে। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। রায়ে বলা হয়, এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষককে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ছিল নজিরবিহীন মহা অপরাধ। এই রায় পুনঃবির্বেচনা চেয়ে তিন আসামির করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
রিভিউ খারিজের আদেশ কারাগারে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আসামিরা। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। নাকচের সেই চিঠি গত ৬ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। জেল কোড অনুযায়ী চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে যে কোন ফাঁসি কার্যকরের নিয়ম রয়েছে।
এই চিঠি পৌঁছার পরই ফাঁসি স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন খুনী জাহাঙ্গীরের ভাই। এতে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি থেমে যায়। তবে কোনো সারবত্ত্বা না থাকায় রিটটি সোমবার (২৪ জুলাই) সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালত বলেন, ফাঁসি বহাল রেখে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন সেখানে আমাদের হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
এর আগে গত মে মাসে খুনী মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও জাহাঙ্গীরের ভাই ফাঁসি ঠেকাতে হাইকোর্টে আরেকটি রিট করেন। ওই রিট খারিজ করে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশিরউল্লাহর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, এ ধরনের ফৌজদারি মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক আপিল ও রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তির পর রিট আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই।