অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি, এদেশের বাম আন্দোলন এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরাধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই। শুক্রবার রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

ন্যাপ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন  জানান, গত ১৪ আগস্ট তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।

আরও পড়ুন: মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে। ছাত্রাবস্থায় বিট্রিশ বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে আজিমপুর সরকারী কলোনীর একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। তার এই ফ্ল্যাটটিই হয়ে উঠেছিল ভাষা আন্দোলনের হেডকোয়ার্টার। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি পুরোপুরিভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলীম লীগের জাঁদরেল প্রার্থী মফিজউদ্দিনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। দলীয় নেতৃত্বের বিরোধীতা করে শেখ মুজিবুর রহমান মোজফফর আহমদের প্রস্তাবের পক্ষে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং প্রস্তাবটি পাশ হয়েছিল।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠন প্রক্রিয়ায়ও একজন ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আইউবের সামরিক শাসন মোজাফফর আহমদের বিরুদ্ধে হুলিয়া, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি এবং ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। তিনি আত্মগোপনে থেকে আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। ৮ বছর আত্মগোপনে থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপেরর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭১ স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃতের একজন এবং প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এ সময় তিনি জাতিসঙ্ঘেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। সরকার ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে অন্যদের সাথে তাকেও স্বাধীনতা পদক দেয়ার ঘোষণা করলে তিনি তা সবিনয়ে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি নিজেকে কুঁড়েঘরের মোজাফফর বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তিনি জীবনে শেষদিনগুলিতে রাজধানীর বারিধারায় মেয়ের বাসায় জীবন-যাপন করতেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029730796813965