৫২ একরের বিশাল ক্যাম্পাসটি যেনো সবুজের চাদরের মোড়া ঢাকার হৃৎপিডণ্ড। এখানকার ছাত্রদের একাডেমিক ফলাফল যেমন ঈর্ষণীয়, তেমনি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও অদম্য। দেশ সেরা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরার স্বীকৃতিও রয়েছে এ কলেজটির। বলছিলাম ‘উৎকর্ষ সাধনে অদম্য’ স্লোগানকে সামনে রেখে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়ানো ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের (ডিআরএমসি) কথা।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন সরকার ইংল্যান্ডের বিখ্যাত পাবলিক স্কুলের আদলে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল স্থাপন করে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কলেজটি শিক্ষার আলোকবর্তিকা হাতে যেমন দ্যুতি ছড়াচ্ছে তেমনি কলেজের প্রাণ প্রকৃতিও সহজে হৃদয় কাড়ে। ৫২ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন তিনটি একাডেমিক ভবনসহ রয়েছে ছয়টি আবাসিক হাউজ (হল)। এছাড়া ছাত্রদের শারীরিক বিকাশের জন্য সুপরিসর ছয়টি খেলার মাঠসহ রয়েছে চিড়িয়াখানা ও পুকুরও। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশে রয়েছে আইটি, সাইন্স, আর্ট, সামাজিক, কালচারাল, ডিবেটসহ মোট ১৮টি ক্লাব। এসব ক্লাবের মাধ্যমে একদিকে শিক্ষার্থীদের যেমন মেধার উন্নয়ন ঘটছে অন্যদিকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।
অতি সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আবুধাবি সাসটেইনেবিলিটি সপ্তাহ-২০২৩ এ সম্ম্নাজনক ‘জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি পুরস্কার’ অর্জন করেছে কলেজটি। এছাড়া সদ্য বিদায়ী বছরে কলেজটির সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি পালক। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে দেশের শ্রেষ্ঠ কলেজ নির্বাচিত হয় ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ। এছাড়া শেখ রাসেল পদক ২০২২ বিজয়ী হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাটাগরিতে দেশসেরা 'ডিজিটাল স্কুল' নির্বাচিত হয় এ প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত মোবাইল অ্যাপ প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় কলেজটি। এদিকে গেল বছরই কানাডায় অনুষ্ঠিত স্পট অ্যাডমিশন অ্যান্ড স্কলারশিপ প্রতিযোগিতায় তিন হাজার চল্লিশটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র খান নাফিউ প্রথম স্থান লাভ করেন।
পুষ্টি সংরক্ষণে কাজ করায় সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ‘জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি পুরস্কার’ লাভ করেছে কলেজটি। আমিরাতের ওই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গ্লোবাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায় ডিআরএমসি। গত ১৬ জানুয়ারি আবুধাবি সাসটেইনেবিলিটি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ৯ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে বিজয়ীদের হাতে এক লক্ষ মার্কিন ডলারের প্রাইজমানিসহ পুরস্কার তুলে দেন। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের পক্ষে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন কলেজটির ক্লাবগুলোর মূখ্য সমন্বয়ক ও শিক্ষক প্রতিনধি সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুন্নবী ও টিমের সদস্যরা।
বিশ্বব্যাপী ৪৫৩৮টি টিমের সাথে প্রতিযোগিতা করে চূড়ান্ত পর্যায়ে সেরা দশে জায়গা করে নেয় এ কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ ইলমান ও তালহা জুবায়েরের টিম। এ অর্জন উপলক্ষে ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের বিজয়ী দল ও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা।
এ অর্জনে কলেজ পরিবারকে অভিনন্দন জানাতে গত ২৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আল হামুদি। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ, এনডিসি, পিএসসি, শিক্ষক প্রতিনিধি মো: নুরুন্নবী, কলেজের উপাধ্যক্ষবৃন্দ তাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। কলেজের সুপরিসর খেলার মাঠ, সবুজ চত্বর দেখে নিজের বিমোহিত হওয়ার কথা জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি পুরস্কার বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুরস্কার। আমার খুবই ভালো লেগেছে, আমি যে দেশে রাষ্ট্রদূত, সেই দেশই এই পুরস্কার পেয়েছে। আমি এই দলের প্রতিটি সদস্যকে আমার উষ্ণ অভিনন্দন জানাতে নিজেই চলে এসেছি। আমি চাই ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এই বিজয় গোটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। আপনাদের প্রতিটি জয় আলো ছড়াক বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
রাষ্ট্রদূতের আগমন উপলক্ষে কলেজ পরিবার অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত বলে জানিয়েছেন শিক্ষক প্রতিনিধি ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: নুরুন্নবী। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ মহোদয়ের নির্দেশে রাষ্ট্রদূত মহোদয়কে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করিয়ে আমাদের কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত করেছি। ঢাকা শহরে এমন সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস দেখে উনি বিমোহিত। এ কলেজের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেছেন তিনি।
লেখক : সোহাগ ফেরদৌস, প্রভাষক, বাংলা ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ