অনলাইন ক্লাসের আগে অফলাইন প্রস্তুতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা সংকটের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্বিবদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল সংকট স্বল্পস্থায়ী হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, এই প্রাদুর্ভাব খুব শীঘ্রই শেষ হবে না। হয়তো পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে কিন্তু ঘুরে ফিরে আবার আসবে। অনেকের ধারণা এটি আগামী দুই বৎসর পর্যন্ত চলমান থাকবে কিংবা সবসময়ের জন্যই থেকে যাবে। অর্থাৎ এটাকে নিয়েই আমাদের আগামী দিনের সকল পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। শনিবার (৩০ মে) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।  

নিবন্ধে আরও জানা,  অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য তা সমূহ ক্ষতির কারণ হবে। শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হতে পারে, সমাজে দেখা দিতে পারে বিশৃঙ্খলা। এমনকি শিক্ষার মানও কমে যেতে পারে অনেক, যার প্রভাব পড়বে জাতীয় জীবনে। সমস্যা সমাধানে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ইউজিসি ইতোমধ্যেই অনলাইনে একটি  সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা বা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা আসবে।

অনলাইনে ক্লাস শুরু করার আগে অফলাইন বা প্রচলিত ক্লাসরুমের ব্যবস্থাপনার উন্নতি দরকার। অনেক বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসরুম নেই। যে কটা আছে, সেখানে আসনের তুলনায় ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি। সব শিক্ষকের আলাদা বসার রুমও সব বিভাগে নিশ্চিত করা যায় না।  দুজন সিনিয়র শিক্ষক এক রুমে বসে বছরের পর বছর কাজকর্ম  করেন। তাই অনলাইনে ক্লাস শুরু করার আগে অফলাইন ক্লাসের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি দরকার। 

আসন সংখ্যার অনুপাতে ছাত্রের সংখ্যা সমান হওয়া। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে  ক্লাস পরিচালনা করতে গেলে একটি ক্লাস চারবারে নিতে হবে। বাস্তবে কি সেটা সম্ভব? ছাত্র-শিক্ষকের আনুপাতিক হারও খুবই গুরুত্ব।

অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অফলাইন ক্লাসের জন্যও ইন্টারনেট জরুরি। বর্তমান সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সার্চ করে তাদের আলোচ্য বিষয়গুলো আপডেট করে থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শ্রেণিকক্ষে ইন্টারনেট কিংবা কম্পিউটার নেই বললেই চলে। লাইব্রেরিতে নেই পর্যাপ্ত সর্বশেষ সংস্করণের বই। অর্থাৎ যেখানে অফলাইন বা প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালনা করাই কষ্টসাধ্য, সেখানে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে কী ধরনের অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা দরকার তা নিশ্চয়ই অনুমেয়।

তাহলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা কি ক্লাস নেব না ? অবশ্যই নেব। স্বল্প পরিসরে হলেও সমাধানের পথ অর্থাৎ অনলাইনের দিকে আমাদের যেতেই হবে। ইতিমধ্যে সেই কার্যক্রম শুরু করেছে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।

এবার আসা যাক ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দিকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী আসে গ্রামাঞ্চল থেকে এবং শহরে এসে টিউশনী কিংবা অন্য কোনো কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে থাকে। এমনকি অনেকে পরিবারকেও সাহায্য করে থাকে। এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেরই নেই ল্যাপটপ বা স্মার্ট ডিভাইস। পক্ষান্তরে করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামাঞ্চলে থাকা অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর পক্ষে উচ্চমূল্যে ডাটা (ইন্টারনেট) ক্রয় করে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হওয়া সহজ নয়। 

এই পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে ইন্টারনেট সংযোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতে সহজলভ্য, সম্ভব হলে করোনাকালীন সময়ে বিনামূল্যে, ইন্টারনেট সংযোগ  নিশ্চিন্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প সুদে অর্থের জোগান দেওয়া যেতে পারে, যাতে সে ল্যাপটপ কিনতে পারে। অর্থাৎ গৃহীত যে কোনো ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে সমতা, অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকা বাঞ্ছনীয়। 

অনলাইন ক্লাসের জন্য দরকার অনলাইন ভিত্তিক লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীরা যাতে সহজেই ই-বুক, ই-জার্নালের এক্সেস পেতে পারে, সে দিকেও নজর দিতে হবে। শিক্ষকরাও তাদের লেকচার নোট আপলোড করে দিতে পারে নির্দিষ্ট ওয়েবপোর্টালে। মোট কথা ছাত্র-শিক্ষক উভয়কেই স্ব-স্ব স্থানে এসব ডিজিটাল পদ্ধতির পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ক্রমে ক্রমে অনলাইনে পরীক্ষা ও ফলাফল প্রস্তুতির দিকেও এগোতে হবে। বেতন, পরীক্ষার ফি, বৃত্তির টাকা সহ যাবতীয় ফাইনান্সিয়াল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ই-ব্যাংকিং এর দিকে অগ্রসর হতে হবে। প্রয়োজনে নগদ, বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, শিওরক্যাশ সহ দেশে বিদ্যমান যাবতীয় ই-পেমেন্ট সিস্টেমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্ট সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। 

সবচেয়ে ভালো হয় যদি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঞ্জুরী কমিশন থেকে একটি ইউনিক অনলাইন প্লাটফর্ম সরবরাহ করা হয়। ভবিষ্যতে করোনা ছাড়া অন্য কোনো দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। তাই সব সময়ের জন্য কিছু  কোর্স ও অফিশিয়াল কাজকর্ম অনলাইনে চলমান রাখতে হবে– যাতে ভবিষ্যতে এই কিছু থেকে সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালনা করা সম্ভব হয় এবং বিশ্ববিদ্যালকে আর বন্ধ রাখতে না হয়।

লেখক: এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার, অধ্যাপক ও পরিচালক, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059590339660645