দেশের ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এ সব প্রমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি একটি বিশেষ সংস্থা দেশের ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড পর্যাবেক্ষণ ও তদন্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো কোনোটির বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাত্, মালিকানা দ্বন্দ্ব, জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) বেলায়েত হোসেন তালুকদারবলেন, একটি সংস্থা তদন্ত করেছে। সে প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমাদের কাছ পাঠানো হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এগুলো যাচাই করে আমাদের কাছে সুপারিশ করবে। এরপর সে সুপারিশের আলোকে যার বিরুদ্ধে যে দণ্ড দেয়া যায় তাই দেয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনে দেশের শীর্ষ স্থানীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তবে ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করেনি কেউ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউজিসির সূত্র জানিয়েছে, দেশের শীর্ষ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বাণিজ্য করে থাকে। ভর্তির জন্য নীতিমালা থাকলেও এগুলো না মেনে ইচ্ছেমতো বা টাকার বিনিময়ে ভর্তি করে থাকে। প্রতিবেদনে এ সব ভর্তি বাণিজ্যের তথ্য এবং যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ সব অনিয়ম করে থাকে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্থিক অনিয়ম রয়েছে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা মালিকরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যান। কোথাও কোথাও ট্রাস্টি বোর্ডের ইচ্ছমতো টাকা ব্যয় করা হয়। কোনো নিয়ম নীতি মানা হয় না। বিভিন্ন ক্রয়ের ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম করে থাকে। এ সব আর্থিক নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে সরকারি বিশেষ সংস্থা। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও কোন কোন ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম করেছে তা তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছে। এ বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
২০১৬ সালে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সবার মুখে আলোচিত হচ্ছে। ওই সময়ে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি জঙ্গি হামলার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ইউজিসির কর্মকর্তারা মনে করেন, আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গিবাদের বিষয়েও প্রমাণ মিলেছে ওই তদন্ত প্রতিবদেনে।
বাংলাদেশে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত বিষয়ে নজরদারির জন্য ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ওই কমিটি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে জঙ্গিবাদের কোনো আলামত আছে কিনা বা চর্চা হয় কিনা, লাইব্রেরিতে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বই আছে কিনা, বা কোনো শিক্ষকের উগ্রবাদী কোনো সংগঠনের সাথে সম্পর্ক থাকার রেকর্ড আছে কিনা সেসব বিষয়ে তারা তদন্ত করে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৯৬টি। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড আইনের আওতায় আনতে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই রয়েছে আইন না মানার প্রবণতা। আট বছরেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিতে পারেনি সরকার। অনিয়ম, দুর্নীতি, মালিকানা দ্বন্দ্বসহ নানা অনিয়ম তো আছেই। এবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে প্রথমবারের মতো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। সে আলোকে কাজ শুরু করেছি।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক