অনুমোদনহীন মেডিকেলের ২০০ শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহীতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন না পাওয়ায় বিক্ষোভ করছে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী। অনুমোদন না থাকায় এমবিবিএস পাস করেও ইন্টার্নশিপ করতে পারছে না এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম ব্যাচের ৪ শিক্ষার্থী। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ক্লাস বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভরত শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা | ছবি : রাজশাহী প্রতিনিধি

এর আগে, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সভা করেছেন ওই কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গত সাত বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে অব্যাহতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি বিএমডিসির অনুমোদন।

এমবিবিএস পাস করেও ইন্টার্নশিপ করতে না পারা ৪ শিক্ষার্থী হলেন মামুনুর রশিদ, রুমা খাতুন, জিন্নাহ ও মৌ খাতুন।

জানা যায়, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দেও কলেজটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ উঠে। মেডিকেল কলেজের অনুমতি না থাকার পরেও ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে ওই সময় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ২০১৫-১৬ সেশনে অনুমতি ছাড়াই ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ কলেজটি ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ততে ছিল।

শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, এ কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের মার্চে মাত্র চারজন এমবিবিএস পাস করেন। কিন্তু বিএমডিসির অনুমোদন না থাকায় ওই শিক্ষার্থীরা গত এক বছর ধরে ইন্টার্নশিপ করতে পারছেন না। এতে করে তারা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসকও হতে পারছেন না।

সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত মোট সাতটি ব্যাচে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় কলেজটিতে। এর মধ্যে প্রথম ২ ব্যাচ ও চতুর্থ ব্যাচে ২৫ জন করে এবং পরবর্তী সময়ে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন মিলে। তবে কলেজটিতে শুরু থেকেই অনুমোদন না থাকা, শিক্ষক সংকট এবং হাসপাতালে রোগী না থাকায় আসন ফাঁকাই থেকে যায়। ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন কলেজটিতে।

কলেজের এমবিবিএস পাস করা শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘নানা সংকটের মধ্যেও আমি গত বছর ১২ মার্চ এমবিবিএস পাস করেছি। কিন্তু কেন ইন্টার্নশিপ করতে পারছি না, সেটি জানাতে বার বার মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গেছি। কিন্তু তারা আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টো আমাকেই নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে, যেন আমি বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করি।’

আরেক মেয়ে শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমরা যখনই এই দাবি তুলি, তখনই আমাদের নানাভাবে হয়রানি, ভয়ভীতি এমনকি ইভটিজিংও করা হয়। এতে করে আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত। কিন্তু এবার আর আমরা থেমে থাকতে চাই না। আমরা রোববার থেকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবো। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

পাবনার অভিভাবক মুক্তিঘোষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘কেন অনুমোদন পাচ্ছে না এবং কলেজটির নানা সমস্যা নিয়ে আমি কলেজটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আমার জুতার সমোতুল্য নন আপনি। কাজেই আপনার সঙ্গে কি কথা বলবো, আপনারা আন্দোলন করে কি করবেন?’

ওই কলেজের সাবেক শিক্ষক ও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মুনসুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে নানা সমস্যা আছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই ভেবে দেখা দরকার।’

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম স্বাধীন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বিএমডিসির অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তারা পরিদর্শন করেছে। কিছু শর্ত দিয়েছে। সেগুলো পূরণের চেষ্টা চলছে। হয়তো দ্রুত আমরা অনুমতি পেয়ে যাবো। তবে কিছু শিক্ষার্থী হয়তো কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আন্দোলনে যাচ্ছে। তারপরেও তারা তাদের ন্যায্য দাবি উত্থাপন করতেই পারে।’

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কলেজে পরিদর্শন শেষে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন দেয়। কিন্তু সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে এ অনিয়ম রাবি কলেজ পরিদর্শকের নজরে আসার পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সেই সেশনের কার্যক্রম স্থগিত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরে সদুত্তর না পেয়ে ওই সেশনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় রাবি কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই সেশনের শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের সেশনজটসহ নানা ভোগান্তির শিকার হন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023128986358643