অবশেষে ছেলের বাসায় ফিরলেন অবসরপ্রাপ্ত সেই প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অবশেষে ছোট ছেলের বাসায় উঠেছেন রাজশাহীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাজহার হোসেন।

বুধবার (৮ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে স্বজনরা তাকে নগরীর বিনোদপুর ধরমপুরের বাসায় নিয়ে যান। হাসিমুখেই বিদ্যালয় ছেড়ে গেছেন বৃদ্ধ এ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে গেছেন বিছানাসহ যাবতীয় জিনিসপত্র।

সকালে বাবাকে ফেরাতে বিদ্যালয়ে যান মেয়ে মমতাজ বেগম, তার স্বামী রফিক উদ্দিন, বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান মুকুল, তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম এবং ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান আপেল।

স্বাধীনতার আগে ভারতের মালদাহের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন মাজহার হোসেন। সেখান থেকে রাজশাহী এসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে প্রতিষ্ঠা করেন স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে প্রায় ২৮ বছর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল তিনি অবসরে যান।

আরও পড়ুন: অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের রাত কাটছে স্কুলের বারান্দায়

পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে বিদ্যালয়ে এসে ওঠেন অসহায় ওই শিক্ষক। এরপর থেকে একা সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

এনিয়ে গত ৩ আগস্ট দৈনিকশিক্ষা ডটকমে  ‘অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের রাত কাটছে স্কুলের বারান্দায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ভাইরাল হয়ে যায় সেই খবর। পরদিন স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমগুলো এনিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর থেকেই মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই।

খবর পেয়ে গত ৫ আগস্ট রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের ওই শিক্ষকের কাছে ছুটে যান। ওই শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে তিনি নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান মুকুলের বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু বহুতল হওয়ায় সেই বাসায় থাকতে রাজি হননি তিনি। পরে ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত বারান্দায় গিয়েই ওঠেন।

শেষ পর্যন্ত রোগাক্রান্ত ওই শিক্ষকের চিকিৎসার দায়িত্বভার নেয় জেলা প্রশাসন। ছেলেরা তার ভরণ-পোষণের দায়িত্বভার না নিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেন জেলা প্রশাসক।

গত তিন দিন ধরে মাজহার হোসেনের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন রাজশাহী নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার শিরিন আক্তার জাহান। মঙ্গলবার তিনিও ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি ।

এ নিয়ে মঙ্গলবার আরেক দফা খবর প্রকাশিত হয় দৈনিকশিক্ষা ডটকমে। এরপর তড়িঘড়ি করে বুধবার ওই শিক্ষককে বাসায় নিয়ে যান ছেলেরা।

আরও পড়ুন: বারান্দায় রাত কাটানো প্রধান শিক্ষকের নাতি দৈনিক শিক্ষাকে যা বললেন....

জানতে চাইলে ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান আপেল বলেন, বাবা নিচতলার খোলামেলা বাসা চাইছিলেন। তার বাসাটি তেমনই। বাসায় আসতে আপত্তি জানাননি বাবা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাসিমুখেই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। সকাল ৮টার দিকে তিন ভাই-বোন গিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছি বাবাকে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুল ইসলাম বলেন, সকালে স্বজনরা এসে তাকে নিয়ে গেছেন। যাওয়ার সময় বেশ হাসিখুশি মনে হয়েছে তাকে। আবার ফিরবেন কি না জানতেই চেয়েছিলেন তিনি জানিয়েছেন আর ফিরবেন না।

দুই ছেলে এবং এক মেয়ের জনক মাজহার হোসেন নগরীর বিনোদনপুর ধরমপুর এলাকার বাসিন্দা। সেই ভিটেতে ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান আপেল মাকে নিয়ে বসবাস করছেন। আপেল নগরীর মদিনাতুল কামিল মাদরাসার গণিতের প্রভাষক। বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান মুকুল পরিবার নিয়ে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0083401203155518