অবশেষে মাদ্রাসার বই থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে জিহাদের পাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অবশেষে মাদ্রাসার পাঠ্যবই থেকে জিহাদের পাঠ বাদ দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত সরকার চেষ্টা করলেও জামাতের খপ্পড়ে থাকা মাদ্রাসাবোর্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্যবই ও নোটবই লেখক-উৎপাদক ও বিক্রেতার সিন্ডিকেটের কারণে পেরে উঠছিল না। সম্প্রতি ৩৫টি পাঠ্যবই যৌক্তিক মূল্যায়ন করে নতুনরূপে তৈরি করা হয়েছে। নতুনভাবে প্রণীত এসব বই আগামী শিক্ষা বর্ষে ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেয়া হবে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা বলেন, ‘জঙ্গিবাদবিষয়ক জাতীয় কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা মাদ্রাসার কোরআন-হাদিস, আরবি ও ফিকহবিষয়ক বিভিন্ন পাঠ্যবই যৌক্তিক মূল্যায়ন করেছি। বইয়ের যেসব স্থানে বিতর্কিত পাঠ, বিশেষ করে জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করার মতো বিষয় ছিল তা বাদ দেয়া হয়েছে।”

জানা গেছে, জঙ্গিবাদ পাঠমুক্ত করা বইয়ের একটি দাখিল অষ্টম শ্রেণীর ‘আল আকায়েদ ওয়াল ফিকহ’। এ6টির দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ পাঠে ইবাদতসংক্রান্ত বিষয় ছিল। ওই পাঠের আলোচনায় ২০১৭ সালের বইয়ে ইবাদতের বিভিন্ন স্তর উল্লেখ আছে। সেখানে মৌলিক ইবাদতের মধ্যে সালাত (নামাজ), জাকাত, সওম (রোজা), হজ, জিহাদ ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। এখানে মৌলিক নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ এবং হালাল রুজির প্রচেষ্টাকে জিহাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বলা হয়, ‘জিহাদ একজন মুমিনের জীবনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ জিহাদ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক- সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। মুখের দ্বারা, কলমের দ্বারা, অর্থের দ্বারা তথা জমি, জান ও জীবিকা সর্বত্র কর্ম সম্পাদন জিহাদের মধ্যে শামিল।’ এরপর  কিতালের (সশস্ত্র যুদ্ধ) প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, মানুষ হত্যা, জানমাল ও সম্পত্তির ক্ষতি করা এবং ভাংচুর করা কোরআনের ভাষায় ফেসাদ, যা হারাম হিসেবে গণ্য।’ আরও বলা হয়, জিহাদ ইবাদত, কিন্তু জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস ইবাদত তো নয়ই, বরং হারাম। এরপরই ফাসাদ সৃষ্টির ওপর কোরআনের যে নিষেধাজ্ঞা আছে সে ব্যাপারে কোরআনের সুরা রা’আদের আয়াত উল্লেখ করা হয়।

আগামী বছরের জন্য প্রণীত পাঠ্যবই ঘেঁটে দেখা গেছে, উল্লিখিত সব পাঠ বাদ দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে ইবাদতের ওপর নতুন আলোচনা যুক্ত করা হয়েছে।

মাদ্রাসা বোর্ড সূত্র জানায়, মাদ্রাসার প্রথম থেকে দশম শ্রেণির আরবি, কোরআন-হাদিস বিষয়ের বই যৌক্তিক মূল্যায়নের জন্য ৮টি বিশেষজ্ঞ ও একটি তদারকিসহ ৯টি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিগুলো ৩৫টি পাঠ্যবইয়ের প্রত্যেক পাঠের বিষয়বস্তু, স্তর শ্রেণীর ক্রমধারা, তথ্য, তত্ত্ব ও ধারণা, অনুশীলনী পর্যালোচনা করে। তাদের দেয়া রিপোর্টের আলোকে বিভিন্ন বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ওইসব বইও আগামী বছর শিশুদের হাতে যাচ্ছে। তবে বইগুলোতে বড় ধরণের কোনো পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

কমিটিগুলো মোট ৮টি দিক নিয়ে কাজ করে। তা হল- পাঠ্যপুস্তকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয়বস্তু থাকলে এবং কোনো গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বিশ্বাস পরিপন্থী কিছু থাকলে তা সংশোধন/পরিমার্জন। সমকালীন জীবনের চাহিদা, পরিবর্তিত জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পাঠের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন। বিষয়ভিত্তিক পাঠ উপস্থাপনে কারিকুলামের নির্দেশনা অনুযায়ী স্তর শ্রেণীর ক্রমধারা রক্ষা করে যৌক্তিক মূল্যায়ন। পাঠ্যপুস্তক যুগোপযোগী এবং এর তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা হালনাগাদ। শিক্ষার্থী মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের পাঠের শেষে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলনী সংশোধন। সমন্বয় ও তদারকি কমিটির তত্ত্বাবধানে মূল্যায়ন কার্য সম্পাদন। সর্বোপরি পাঠ্যবই ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রণীত কারিকুলামের নির্দেশনা অনুযায়ী রচনা করা হয়েছে কিনা তা মূল্যায়নের পর প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ে সংশোধন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মাদ্রাসার পাঠ্যবই থেকে জঙ্গিবাদের পাঠ থাকলে তা বাদ দেয়ার অনুরোধ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত বছরের ২৪ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয়। তাতে মাদ্রাসার কোরআন, হাদিস, সংবিধান এবং জাতীয় চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় ও কোনো রাজনৈতিক দল সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধ বা রচনা প্রভৃতি বাদ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ৮টি বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ৫ জন করে ৪০ জন সদস্য কাজ করেন। তারা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর কোরআন মজিদ ও তাজবিদ, আকাইদ ও ফিকহ এবং আরবি বিষয়ে ১৫টি বই মূল্যায়ন করেন। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর কোরআন মজিদ ও তাজবিদ, আকাইদ ও ফিকহ, হাদিস শরিফ এবং আরবি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র বিষয়ে ২০টি বই মূল্যায়ন করা হয়।

উল্লিখিত ৩৫টি বইয়ের বাইরে মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কৃষিশিক্ষা, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি ইত্যাদি পড়ানো হয়।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040040016174316