উচ্চমাধ্যমিকের অবৈধ আইসিটি বইয়ে সয়লাব সারাদেশের বইয়ের দোকান। বই কিনতে গেলে বিক্রেতারা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অনুমোদিত আইসিটি বইয়ের পরিবর্তে অননুমোদিত বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। ওই বইগুলো বিক্রিও হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। আর অননুমোদিত বইগুলো প্রকাশক ও লেখকদের এজেন্টরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইয়ের প্রচারণায় সক্রিয় আছেন। তারা বিভিন্ন পন্থায় শিক্ষার্থীদের অননুমোদিত আইসিটি বই কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন। অনুমোদনহীন বইগুলোর লেখকের নামের জায়গায় দেখা যাচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকদের নাম। যদিও এনসিটিবি বলছে, তাদের প্রকাশিত বই ছাড়া অন্যান্য বই অনুমোদিত নয়। তাই সব কলেজ-মাদরাসাকে সরকার অনুমোদিত বই পড়াতে বলা হয়েছে। বোর্ড এসব বই মুদ্রণ, প্রকাশ ও বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
গত শনি ও রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের আশপাশের বেশ কয়েকটি বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রি হচ্ছে অননুমোদিত আইসিটি বই। কলেজের আইসিটি বই খুঁজতেই বিক্রেতারা অনুমোদনহীন বইগুলো এগিয়ে দিচ্ছেন। অননুমোদিত বইগুলো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যদিও এনসিটিবি অনুমোদিত বইয়ের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১২৪ টাকা। এনসিটিবি অনুমোদিত বইটির সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বইটি লিখেছেন মো. তাহমিদুল ইসলাম রাফি, তামিম শাহরিয়ার সুবীন, ফরহাদ মনজুর, মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী ও অধ্যাপক লুৎফুর রহমান।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এম এ এস পাবলিকেশন্সের প্রকাশিত একটি অনুমোদিত আইসিটি বই বিক্রি হচ্ছে বেশি। বইটির লেখকের নামের জায়গায় রয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রধান ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসাইনের নাম। আইসিটি পাবলিকেশন্সের প্রকাশিত অপর একটি অননুমোদিত বই বাজারে মিলছে। এ বইটি লিখেছেন মো. নাইমুল হন নাঈম। লেখকের পরিচয় দেয়া হয়েছে, ঢাকা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষক ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রধান।
অপর একটি অনুমোদনহীন আইসিটি বইয়ে লেখকের নামের স্থানে আছেন প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের নাম। বিক্রেতাদের এসব বই নেয়ার পরামর্শ দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে এনসিটিবির প্রকাশিত ও অনুমোদিত বই চাইলে বিক্রেতারা তা পেছনের দিক থেকে বের করে দিচ্ছেন। অনুমোদিত বইয়ের দাম যেখানে ১২৪ টাকা অনুমোদনহীন বই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
কলেজে নতুন ভর্তি হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুমোদনহীন বই বিক্রেতাদের এজেন্টরা অননুমোদিত বই বিক্রির প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের দেয়া বিভিন্ন পোস্টে তারা অননুমোদিত বই কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অনুমোদনহীন বইয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে। গতকাল রোববার এনসটিবির সচিব নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রকাশিত ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তকই হচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত একমাত্র পাঠ্যপুস্তক। এই পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য কোনো লেখক অথবা প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তক সরকার অনুমোদিত নয়।
এতে আরও বলা হয়েছে এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তে অন্য কোনো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও বাজারজাতকরণ আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তি, প্রকাশক, প্রেস, বাইন্ডিংখানা, লাইব্রেরি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি দেশের সব কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত আইসিটি বইয়ে পাঠদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। যেহেতু সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এই পাঠ্যপুস্তকটিই পাঠদান ও পাবলিক পরীক্ষার জন্য অনুসরণ করা হবে সেহেতু অভিভাবকদের এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত আইসিটি বই সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
যদি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি প্রকাশিত আইসিটি বই ছাড়া অন্য কোনো অনুমোদনবিহীন পাঠ্যপুস্তক পাঠদান করে তবে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।