অভুক্ত পশু-পাখির জন্য মধুর ক্যান্টিনে রান্না

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

প্রায় নিস্তব্ধ শহর। চারদিকে সুনসান নীরবতা। মানুষের কোলাহল নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে টানা ছুটিতে মানুষ এখন ঘরবন্দি। দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট সব কিছু বন্ধ। শহরের যে প্রাণীগুলো হোটেল, রেস্টুরেন্টের উচ্ছিষ্ট খাবারের ওপর নির্ভরশীল, মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে যে প্রাণীগুলোর দিন গুজরান হতো, অবলা এসব প্রাণীর দিন কাটে এখন না খেয়ে। রোববার (৫ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আরিফুর রহমান। 

অভুক্ত কুকুরদের খাবার দিচ্ছেন ঢাবি ছাত্র ইসতিয়াক | ছবি : সংগৃহীত

প্রতিনেবেদনে আরও জানা যায়, অভুক্ত এসব প্রাণী খাবারের খোঁজে শহরের অলিগলিতে ছুটতে ছুটতে হয়রান; কিন্তু কোথাও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত খাবারের দিশা। খাবার না পেয়ে ক্লান্ত-ক্ষুধার্ত হয়ে একসময় রাস্তার পাশেই শুয়ে পড়ছে তারা। রাজধানীর অনেক স্থানেই গভীর রাতে শোনা যায় অভুক্ত প্রাণীগুলোর আর্তনাদ। কুকুরের মতো ঢাকায় পাখিরাও পড়েছে খাদ্যসংকটে। যদিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় কুকুর, বিড়ালকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকজন পশুপ্রেমী মানুষ। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে বেশ কয়েকজন পশুপ্রেমী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অনাহারী কুকুর, বিড়ালের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। যদিও একে অপ্রতুল বলছেন তাঁরা। চলমান মানবিক বিপর্যয়ের সময় প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা করতে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে কিছু টাকা প্রাণীদের খাবারের পেছনে ব্যয় করার দাবি করেছেন তাঁরা।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর থেকে হেঁটে ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলে চলে আসছেন অনেকে। কারণ ক্ষুধা দিন আনি দিন খায় মানুষকে ঘরে বন্দি করে রাখতে পারছে না। একই অবস্থা মানুষের দেওয়া খাবারের ওপর নির্ভরশীল শহুরে পশুদেরও। ক্ষুধার যন্ত্রণায় গতকাল রাজশাহী শহরে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানায় ঢুকে পাঁচটি কুকুর চারটি হরিণকে ছিঁড়ে খেয়েছে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনেও ক্ষুধার যন্ত্রণায় কুকুর বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। এমন বাস্তবতায় কুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পশুপ্রেমীরা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ২০ মার্চ ছুটি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ওই দিনই নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়। ঠিক এমন সময় ওই কক্ষে আসে একটি বিড়াল। হঠাৎ তাঁর চিন্তা হয়, হল বন্ধ হয়ে গেছে। সব শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাচ্ছে। তাহলে এসব প্রাণীর খাবারের কী হবে? সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন হৃদয়। হলে থেকে এখন প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের কুকুর, বিড়ালদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন হৃদয়বান যুবক হৃদয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এই প্রতিবেদক দোয়েল চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখেন, ইসতিয়াক কয়েকটি কুকুরকে মাছের কাঁটা, মুরগির উচ্ছিষ্ট হাড়গোড় দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবলা প্রাণীদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন।

ইসতিয়াক  বলেন, ‘২১ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত নিজেদের উদ্যোগে প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই সময়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিস্কুট, খাবার দিয়ে অনেকে সহযোগিতা করেছে।’ অবশ্য এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নেতারা কুকুরের খাবারের অর্থায়ন করছে বলে জানান ইসতিয়াক। এখন মধুর ক্যান্টিনে কুকুরের জন্য রান্নাও হয়। ডাকসু নেতা তানভীর হাসান সৈকতসহ কয়েকজন মিলে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ক্যাম্পাস এলাকায় কুকুরদের খাবার সরবরাহ করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪০০টি কুকুর আছে উল্লেখ করে ইসতিয়াক বলেন, একার পক্ষে পুরো ঢাকা শহরে প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা করা কঠিন। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সংসদ ভবন এলাকা, মিরপুর, ধানমণ্ডি, মতিঝিল এলাকায় কুকুরদের প্রতিদিন খাবার দিয়ে যাচ্ছে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে কুকুরদের খাবারের ব্যবস্থা করছে তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল  বলেন, ‘এক জরিপে দেখা গেছে ঢাকায় ৬০ হাজার কুকুর আছে। টানা ছুটির কারণে সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় কুকুরদের খাবার বন্ধ হয়ে গেছে। এত বিশাল সংখ্যক কুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করা এককভাবে কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। সে জন্য আপত্কালীন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে। কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকেও কিছু টাকা বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘অবলা কুকুরদের খাবারের ব্যবস্থা করতে সচেতন মানুষ এগিয়ে আসছে। তবে সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। এদিকে ঢাকার বাইরেও কুকুরদের খাবারের সংকট তৈরি হয়েছে।’

অঘোষিত লকডাউনের কারণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন এখন বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত প্রায় দুই হাজার কুকুর খাবার সংকটে পড়েছে। গতকাল এ বিষয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জনপ্রতিনিধি হাবিবুর রহমান খান  বলেন, ‘স্থানীয় সব হোটেল বন্ধ। তাই কুকুরগুলো খুব বিপদে পড়েছে। কিন্তু কী করব? স্থানীয় মানুষদেরও আয় বন্ধ। কোন দিকে তাকাব? বুঝতে পারছি কুকুরগুলো অনেক কষ্টে আছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।’ এদিকে কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকায়ও কুকুরগুলো পড়েছে খাবার সংকটে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় একসময় কুকুরগুলো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037620067596436