অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের চেয়েও শক্তিশালী : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের চেয়েও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন।     

শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় না, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেগুলো দেশ তার থেকে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। কাজেই সিঙ্গাপুর যে আমরা বানাব দেশকে, অবশ্যই আমরা সিঙ্গাপুর থেকেও কিন্তু এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী আছি। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি।” 

সিঙ্গাপুরের কম আয়তন ও স্বল্প জনসংখ্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখানে খুব ডিসিপ্লিন।” 

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী | ছবি : সংগৃহীত 

অপরদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় ভূখণ্ড কম থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানে এই উন্নয়ন করাটা এটা যে কত কঠিন কাজ! আর সিঙ্গাপুরে কিন্তু ও রকম বিরোধী দল বা ওই রকম কিছু নাই। একটা পত্রিকা সরকার দ্বারা চলে। ওই সরকারের নিয়ন্ত্রণেই সমস্ত পত্রিকাগুলো। ওই একটা কোম্পানির পত্রিকা চলবে।

“কাজেই সেখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক পরিবেশ যেভাবে তাদের উন্নয়ন করাটা অনেক সহজ।”

পক্ষান্তরে বাংলাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস, খুন-খারাবি, অত্যাচার-নির্যাতন মোকাবেলা করতে হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনিদের বিচার থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই খুনিদের সবাইতো উৎসাহিত করেছে। খালেদা জিয়া কর্নেল রশিদকে ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এই পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসায়। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে পার্টি করতে দেয়। ফ্রিডম পার্টি করে এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করবার সুযোগ করে দিয়েছিল।”

সব শোক দুঃখ বেদনা ভুলে জাতির পিতার ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে কাজ করে যাওয়ার সংকল্পের কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “কী যন্ত্রণা নিয়ে আমি আছি, সেটা আমি বুঝি। তারপরও সব ব্যথা, সব কষ্ট সহ্য করে একটা জিনিসই শুধু চিন্তা করেছি যে, আমার বাবা এই দেশটা স্বাধীন করেছেন যে মানুষের জন্য, সেই সাধারণ মানুষের জীবনটা যেন সুন্দর হয়। সেই জন্য নিজের জীবনের শোক, ব্যথা সব কিছু বুকে চেপে রেখে আমি দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি।” 
কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব ক্ষেত্রগুলো বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যা ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।”

যে অর্থ খরচ করে দেশের মানুষ বিদেশে যায় তার অর্ধেক অর্থ খরচ করে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “৬-৭ লাখ টাকা খরচ করে যদি বিদেশে যায় আমি বলব, বিদেশে না গিয়ে ওর অর্ধেক টাকায় তারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। সেই সুযোগটা রয়েছে। বাংলাদেশ এখন তারা নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারে। এত টাকা খরচ করে তারা বিদেশে যাবে। সেখানে চাকরির গ্যারান্টি নেই।” 

এভাবে বিদেশে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। 

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভাইরাসটা যেভাবে চায়নায় দেখা গেল আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের দেশে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। 

“কেউ বিদেশ থেকে আসলে বিশেষ করে চীন বা যে সমস্ত দেশে এই ভাইরাসটা দেখা দিয়েছে যখনই ওই দেশ থেকে কেউ আসে আগে যেখানে আসলে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হত, সেটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি না।

“আমাদের এয়ারপোর্ট বা অন্যান্য সব জায়গায় কেউ আসলে সাথে সাথে তার পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেভাবে আমরা নিশ্চিত হচ্ছি যে, এই ধরনের ভাইরাস নিয়ে কেউ এদেশে ডুকছে কি না। কারও যদি এতটুকু সন্দেহ হয় সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো এবং তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। তাকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে তারপর আমরা ছাড়ছি। যাতে এটা বিস্তার লাভ করতে না পারে বাংলাদেশে। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।”

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা সমস্যা আমরা এখন দেখছি কতগুলো মানুষ নামের পশু। পশুরও অধম বলব। অত্যন্ত জঘন্য কাজ এই ধর্ষকরা করে যাচ্ছে। তাদেরও তো মা, বোন আছে। তাদেরও তো মেয়ে আছে। তারা এটা কেন বুঝতে পারে না আমি জানি না। মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের কি করে হতে পারে? 

“এর বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি যেমন সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এখন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, ধর্ষক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমরা ঘোষণা দিচ্ছি। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শেষ হল একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন, যা চলতি বছরের প্রথম অধিবেশন ছিল।

গত ৯ জানুয়ারি শুরু হয় এই অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর দিন নিয়ম অনুযায়ী সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে এই ভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানাতে একটি প্রস্তাব তোলেন প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।

২৮ কার্যদিবসের পুরো অধিবেশনজুড়ে ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ২২৭ জন সংসদ সদস্য ৫৪ ঘণ্টা ২৪ মিনিট আলোচনা করেন।

মঙ্গলবার রাতে সমাপনী নিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনানোর মধ্য দিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এর আগে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানানোর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই অধিবেশনে মোট ৭টি বিল পাস হয়। এছাড়া ৭১ বিধিতে পাওয়া ২৩৫টি নেটিশের মধ্যে ১২টি নোটিশ গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে আলোচনা হয়েছে ৮টি। ৭১ (ক) বিধিতে ৬০টি নোটিশ আলোচিত হয়েছে।

অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন জমা পড়ে ১২৪টি। এর মধ্যে ৫৫টি প্রশ্নের জবাব দেন সংসদ নেতা। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের জন্য দুই হাজার ৯০২টি প্রশ্ন জমা পড়ে, মন্ত্রীরা উত্তর দেন ২ হাজার ৩৭৬টি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00313401222229