সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ১৮ লাখ। প্রতি বছর এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। একদিকে ধর্মীয় চিন্তা, অন্যদিকে খরচ- এ দুটি কারণেই অভিভাবকরা সন্তানদের কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করছেন।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা হাসিনা আকতার। তার তিন সন্তানের সবাই কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, আমার সন্তানকে ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করাতে চাচ্ছিলাম কিন্তু এর জন্য আমাকে ৪০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হতো। সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একটা কিন্ডারগার্টেনে অনেক ব্যয় করতে হয়। সে তুলনায় এখানে তেমন ব্যয় নেই। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমি একজন মুসলিম। সে হিসেবে আমার বাচ্চাকে এমন শিক্ষায় দিতে চাই যাতে তার জীবন কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে আলোকিত হয়।
২০১৬ সালে এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার এবং ছাত্রছাত্রী প্রায় ১৪ লাখ। ঢাকায় বেশ কিছু মাদ্রাসায় ঘুরে দেখা গেছে, এসব মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মূলত এসেছে পরিবারের ইচ্ছায়। তবে এর সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ইচ্ছাও ছিল।
কওমি মাদ্রাসার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র ও এতিম হলেও সমাজের সচ্ছল ব্যক্তির সন্তানরাও পড়াশোনা করছে। দরিদ্র হোক বা সচ্ছল,
সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠানোর পেছনে ধর্মীয় চিন্তাই বেশি কাজ করছে অভিভাবকদের মনে।
দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর কার্যক্রম সরকারি তদারকির বাইরে। এসব প্রতিষ্ঠানে কী পড়ানো হবে সে বিষয়েও সরকারের কোনো নজরদারি নেই। বেশিরভাগ মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বাড়ছে। কওমি মাদ্রাসার সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোর্ড বেফাকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বিভিন্ন শ্রেণিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার, ২০১৮ সালে সেটি দ্বিগুণ হয়েছে।
শিক্ষাবিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, অভিভাবকরা যে সন্তানদের মাদ্রাসায় দিচ্ছেন এর পেছনে শুধু ধর্মীয় কারণই নয়, অর্থনৈতিক কারণও জড়িত। নিম্নবিত্ত অভিভাবকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই কওমি মাদ্রাসাকে বেছে নেন।
কওমি মাদ্রাসাগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই থাকা-খাওয়ার সুযোগ পায়। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ব্যয় বহন করছে কারা? কওমি মাদ্রাসার যারা সমালোচক তাদের মনে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। এসব মাদ্রাসা বিদেশি সহায়তা পায় কি-না সে প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। তবে এসব মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পৃক্ততরা বলছেন, কোনো বিদেশি সহায়তা নয়, সমাজের ভেতর থেকেই টাকার জোগান আসে।
জামিয়া হোসেনিয়া ইসলামিয়া আর্জাবাদ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, দেশের মুসলিম জনসাধারণ স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে যে অনুদান দেন সে অনুদানেই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়।
সূত্র: বিবিসি