শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মানুষ শিক্ষা অর্জন করে যদি দেশ ও সমাজের কাজে না আসতে পারে তাহলে সে শিক্ষার কি মূল্য। দেশের শিক্ষিত সমাজ দেশকে কিছু দেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। কোনো প্রকার ত্রুটি রাখে না এ চেষ্টায়। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই এই চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। চাকরির জন্য হাজার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়ে পরিশেষে তাদের শিক্ষার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়। যদিও শিক্ষা অর্জন শুধু চাকরির জন্য নয়। তেমনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো এনটিআরসিএ। শিক্ষক নিয়োগের অন্যতম মাধ্যম এটি। শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করতে হলে নিবন্ধন পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে সনদ অর্জন করা বাধ্যতামূলক। এরই মধ্যে ১৬টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েক লাখ শিক্ষার্থী কৃতকার্যের সনদ নিয়ে বেকারত্বের জীবনযাপন করছে। বুধবার (২৮ অক্টোবর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, বিভিন্ন অযুহাতে দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে সমালোচনার পাত্র হয়েছে এনটিআরসিএ। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও দীর্ঘায়িত হওয়ায় সনদধারীরা এনটিআরসিএ’র প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের মতো করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কমিটির লোকজন অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। অর্থ যেখানে স্থান পায় সেখানে ভুয়া সনদ মর্যাদা পায়। টাকার কাছে হেরে যায় মানুষের মানবতা। এনটিআরসিএ’র কিছু মনুষ্যত্বহীন দানবের কারণে সারা দেশ হাজার হাজার জাল সনদ ছড়িয়ে গেছে। যে সনদ বেকার করে দিয়েছে অসংখ্য মেধাবীকে। জাল সনদ দিয়ে চাকরি নিয়ে সরকারি বেতন নিয়ে আরাম আয়েশে দিনযাপন করছে, আর আসল সনদধারী মেধাবী সম্পদরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। যার প্রমাণ মিলছে সম্প্রতি এনটিআরসিএ’র অনুসন্ধানে। এই অনুসন্ধানকে চিরুনী অভিযানে রূপান্তর করলে দেশের সমস্ত নকল সনদধারী চিহ্নিত হয়ে যাবে। আর নকল সনদধারীদের শাস্তির আওতায় আনলে উন্মোচিত হবে নকল সনদ প্রদানকারীদের চেহারা। তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
নিয়মিতভাবে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় এনটিআরসিএ’র তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে ২০১৮ সালের শেষের দিকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ওই নিয়োগে জটিলতার শেষ নেই। মেরিট লিস্ট অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা হাইকোর্ট থেকে বলা হলেও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল অন্যভাবে। সনদ অনুযায়ী যে যত প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছা আবেদন করেছিল। এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে এনটিআরসিএ জুয়া খেলাকেও হার মানিয়েছিল। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মহা কৌশলের ফাঁদে পড়েছিল অসহায় নিবন্ধিতরা। তারপরেও এনটিআরসিএ’র মহা জটিলতায় অসংখ্য শিক্ষক সুপারিশ পেয়েও দেড় বছরেও এমপিও না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সব কথার শেষ কথা, যে নিয়োগেই হোক না কেন সুষ্ঠ প্রক্রিয়ায় যেন নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা নিয়োগ পায়। জটিলতার কোন ছোয়া যেন লাগে না কোন শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। তাহলেই শিক্ষকদের আস্থার জায়গা এনটিআরসিএ নামক প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষকদের ভরসার প্রতীক এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে অব্যাহত রাখতে হবে এর সুষ্ঠু কার্যক্রম।
লেখক : আজিনুর রহমান লিমন