ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়অর্ধেকের বেশি ছাত্রী আবাসন সংকটে

হাসান মেহেদী |

সারি সারি বিছানা। এক সারি থেকে আরেক সারির মাঝখানে চলাচলের জন্য এক চিলতে জায়গা। তা দিয়ে কোনো রকমে পার হতে হয়। এক বিছানা থেকে আরেক বিছানার দূরত্ব্ব ইঞ্চিখানেক। বই এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিছানার নিচে রাখা। মেঝেতে পড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের অনার্স ভবনের ‘গণরুম’ ১০২ নম্বর কক্ষের চিত্র। এভাবে কষ্টকর পরিস্থিতিতে বসবাস করতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি ছাত্রীর আবাসন সংকট কিছুতেই কাটছে না। প্রতিবছর ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না আবাসন সুবিধা। ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন সংকট। 

হল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রী হলগুলোয় গণরুমে প্রতিটি কক্ষে থাকছে ২০ থেকে ৩০ জন ছাত্রী। কোনো কোনো হলে থাকে তারও চেয়ে বেশি। অবশ্য গণরুমের বাইরে অন্য কক্ষগুলোর অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। আসনসংখ্যা কম হওয়ায় বেশির ভাগ হলে প্রতি বেডে দুজন, চারজনের কক্ষে থাকতে হয় আটজনকে। এসব কক্ষ পাওয়ার সুযোগ হয় তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে গিয়ে। প্রায় প্রতিটি হলেই রয়েছে অতিথি কক্ষ। সিট পাওয়ার আগে মাসিক ভাড়া দিয়ে সেখানে থাকতে হয় ছাত্রীদের।

ছাত্রীদের অভিযোগ, হলে আবাসন সুবিধা না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের হোস্টেল ও মেসে থাকতে হচ্ছে তাদের। গ্রাম থেকে আসা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রীদের জন্য তা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। বাইরের মেস ও হোস্টেলগুলোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই ঘটছে যৌন হয়রানিসহ নানা ঘটনা।  ফলে ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে হলগুলোর গণরুমে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ বছরের বার্ষিক বিবরণী থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হল ও দুটি ছাত্রী হোস্টেলে ২০ হাজার ৭৩৯ জন ছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক ছাত্রীর সংখ্যা ছয় হাজার ৮৫৬ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী রোকেয়া হলে এক হাজার ৫০০ জন, শামসুন্নাহার হলে এক হাজার ৪০৫ জন, কুয়েত মৈত্রী হলে ৬৮৩ জন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৯৬৮ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে দুই হাজার ৩০০ জন, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাসে ১৩০ জন, শহীদ অ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেলে ৭৫ জন ছাত্রী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। তবে হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থীর তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি ছাত্রী বসবাস করছে।

বিবরণী থেকে জানা যায়, রোকেয়া হলে পাঁচ হাজার, শামসুন্নাহার হলে চার হাজার ৪৭৮ জন, কুয়েত মৈত্রী হলে এক হাজার ২০০ জন, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে এক হাজার ৪৩৯ জন, সুফিয়া কামাল হলে এক হাজার ৫০০ জন অনাবাসিক ছাত্রী রয়েছেন।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ৭ মার্চ নামে একটি বর্ধিত ভবন নির্মিত হয়েছে। ভবনটিতে প্রায় এক হাজার ছাত্রী আবাসন সুবিধা পেলেও সংকট কাটছে না। আবাসন সংকট কাটাতে হলে প্রয়োজন একাধিক নতুন হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিস সূত্র জানায়, জায়গার অভাবে নতুন হল নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ সামনে রেখে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করতে হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জীবন কুমার মিশ্র  বলেন, ‘ছাত্রীদের আবাসন সংকট রয়েছে এটা ঠিক। সংকট নিরসনে সম্প্রতি ৭ মার্চ নামে একটি ভবন নির্মাণ করা হলেও সংকট কমানো যাবে না। আবাসন সংকট নিরসনে প্রয়োজন নতুন হল নির্মাণ। তবে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বাজেটের ঘাটতি নেই। শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে হল নির্মাণের কথা রয়েছে।’

ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিয়ে শামসুন্নাহার হলের এক ছাত্রী তাসনিম আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হলের চেয়ে মেয়েদের হল কম। অনেক ভোগান্তি পার করে তারপর মেয়েদের হলে উঠতে হয়। চারজনের কক্ষে গাদাগাদি করে আটজনকে থাকতে হয়। অনেকে হলে সিট না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের হোস্টেল ও মেসে থাকছে।

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052709579467773