অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে চাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনও অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে; সেটাই আমি চাই।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২১’ এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ রবিবার (১৮ অক্টোবর) প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’।

দিবসটি উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশ সামনে কেমন হবে তার জন্য পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের আগামী দিনের চলার পথে যেন আর কোনও হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। ঘাতকের বুলেটে আর কোনও শিশুকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। আমি জাতির কাছে এই আহ্বানই জানাবো যে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, তাদের ভালোবাসা দেওয়া, তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনটাকে সার্থক করা, অর্থবহ করা; এটাই যেন সকলের আকাঙ্ক্ষা হয়। এটাই যেন সকলের কর্তব্য পালনকালে সকলের আদর্শ হয়- সেটাই আমি চাই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় তার ছোট ছেলে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলে (বর্তমানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ) চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ রাসেল। নিজের ছোটভাইকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিশুকে হত্যা মানেই লাখো-কোটি শিশুর জীবনে একটা আশঙ্কা এসে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখেছি যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদেশের যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাও কিন্তু শিশুদের রেহাই দেয়নি। ছোট্ট নবজাতক শিশুকেও তারা হত্যা করেছে। এমনকি মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করেছে। আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত একই কায়দায়, ঠিক যেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল ওই ভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

পচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরেও আরও অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেনাবাহিনীতেই ১৯ বার ক্যু হয়েছে। একটা বাহিনীতে যদি ১৯ বার ক্যু হয়, তাতে ডিসিপ্লিন আছে বলে কেউ দাবি করতে পারে না। আর এই একেকটা ক্যু ধরে ধরে হাজার হাজার সৈনিক অফিসার হত্যা করা হয়েছে। অনেকের পরিবার লাশও পায়নি। সেই সাথে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও অকথ্য নির্যাতন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। তাদের দিনের পর দিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে। আবার ঠিক সেই ঘটনা আমরা দেখেছি।

পচাত্তরের পর বারবার এ ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবারও সেই একই ঘটনা। এরপর অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে কতোভাবে মানুষকে হত্যা করেছে- বাসে আগুন দিয়েছে, শিশু পুড়ে মারা গেছে। এই ঘটনাও আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। কিন্তু আমরা তো এ রকম চাই না, আমরা চাই বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রত্যেকটা শিশুর জীবন অর্থবহ হবে, সুন্দর হবে। এভাবে অকালে ঝড়ে যাবে সেটা আমরা চাই না। একটি ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার আগে অকালে ঝড়ে যাক এটা কারো আকাঙ্ক্ষা নয়। এটা কেউ চায় না।  

‘পচাত্তরের পর শুধু হত্যা না, একই সাথে ইতিহাসকেও মুছে ফেলা হয়েছিল’ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অনেক প্রজন্ম জানতেই পারেনি যে সেখানে কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে বা একাত্তর সালে কীভাবে গণহত্যা হয়েছিল আমাদের দেশে। শিশুরা যেন নিরাপদ থাকে। এই বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশু নিরাপত্তার জন্য আইন করে দিয়ে যান। কী দুর্ভাগ্য আমাদের ঘাতকের হাতে তারই সন্তানদের হত্যার শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে যেন আর এই ধরনের কোনও ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, সেটাই আমরা চাই।

শেখ রাসেলের স্মৃতি চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো তুমি কী হবে? সে বলতো আমি আর্মি হবো। সে একটা আর্মি অফিসার হবে- এটাই তার জীবনের স্বপ্ন ছিল।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023839473724365