অ্যাডহক কমিটি : বোর্ডের ফি যোগাতে হয়রান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা সমাধান চান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

গত বছরের মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনের নির্বাচন বন্ধ আছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-উৎসব ভাতার টাকা তোলাসহ নানা কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে হচ্ছে। প্রতি ৬ মাসের জন্য স্কুল কলেজের অ্যাডহক কমিটি গঠনে বোর্ডগুলোকেই ফি দিতে হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে। সব মিলিয়ে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকার মতো। এই উচ্চহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা। বাধ্যতামূলক না হলেও স্থানীয় এমপির ডিও লেটার, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করতে করতে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন তারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটি গঠনের ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে কমিটির মেয়াদও বৃদ্ধি।  

প্রধান শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ১৬ মাসের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বোর্ডগুলোও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন স্থগিত করেছে। এ পরিস্থিতিতে এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতার বিল স্বাক্ষরসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচলনায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে হচ্ছে। এ জন্য বোর্ডগুলোতে আবেদন ফি দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। মোট খরচ পাঁচ হাজার টাকার বেশি।

তারা আরও বলছেন, অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য আমাদের বোর্ডকে ফি দিতে হয়। তা ছাড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অভিভাবক প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে হয়। এ জন্য কোন ফি দেয়ার বিধান না থাকলেও আমদের কিছু খরচ দিতে হয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বারবার অ্যাডহক কমিটি গঠন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। 

শিক্ষকরা আরও বলেন, করোনাকালে গত এক বছরে নির্বাচিত কমিটি ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো দুই দফা অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় দফায় অ্যাডহক কমিটি গঠনের সময় এসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ঠিক মত তুলতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রতি ৬ মাস পরপর অ্যাডহক কমিটি গঠনের আবেদন করতে তিন হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। যা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনেক। এর থেকে আগের নির্বচিত কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিলেও সমস্য অনেকটা সমাধান হবে বলে শিক্ষকরা মনে করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি এমপিওভুক্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, রেগুলার কমিটির মেয়াদ দুই বছর কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অ্যাডহক কমিটির ছয় মাস! তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করছে অথবা নিয়মিত কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাবোর্ডগুলো দিচ্ছে না। 

গতমাসে এক ওয়েবিনারে যশোর অঞ্চলের একজন প্রধান শিক্ষক সরাসরি যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন অ্যাডহক কমিটি গঠনের হয়রানি ও উচ্চ হারে ফি নিয়ে। এর ২৪ ঘন্টার মধ্যে অ্যাডহক কমিটি গঠনের আবেদন ফি কমিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। বোর্ড বলছে, বোর্ডের অর্থ কমিটি এবং বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক করোনাকালীন স্কুল-কলেজের অ্যাডহক কমিটি গঠনের আবেদন ফি তিন হাজার টাকার পরিবর্তে এক হাজার পাঁচশত টাকা নির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে করোনা পরিস্থির উন্নতি হলে তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর নিয়মিত কমিটি গঠন কিংবা অন্য কোনো কারণে অ্যাডহক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত তিন হাজার টাকা ফি দিতে হবে। তবে, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডসহ অন্যান্য বোর্ডগুলো আগের নিয়মেই ফি নিচ্ছে। 

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলছেন, যশোর বোর্ড যেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডহক কমিটি গঠনের ফি কমিয়েছে আমরা সারাদেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডগুলোও অ্যাডহক কমিটি গঠনের ফি কমানোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আগের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে দিলেও এ জটিলতা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা পাবে।  

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। ইতোমেধ্য অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিক কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে। একাধিকবার অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়েছে। এ অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থাও ভালো না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানোর খরচ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তার পরও অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে গিয়ে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রতিনিধি মনোনয়ন, জেলা প্রশাসন বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে অভিভাবক প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, করোনার সময়ের জন্য পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত চলমান অ্যাডহক বা নিয়মিত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করার।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত হলে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জানি করা হয়েছে। আমরা অনুরূপ নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র চাই। আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এ দাবি জানিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেবো। 

একজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষাবোর্ড প্রবিধান মালায় সংশোধন করা হলে আগের কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধিতে জটিলতা হবে না।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031061172485352