আইআইইউসির ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে আকস্মিকভাবে তিন শিক্ষক ও ছয় কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতির কারণ হিসেবে চিঠিতে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুধু লেখা হয়েছে, ‘আপনার সার্ভিসের আর প্রয়োজন না থাকায় ১৫ জানুয়ারি থেকে থেকে আপনাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’

প্রতিদিনের মতো গত শনিবার কর্মস্থলে গিয়ে অব্যাহতির চিঠি পেয়ে বিস্মিত ওই শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অব্যাহতির বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বেশির ভাগই এ নিয়ে সমালোচনা করেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁরা সবাই জনপ্রিয়। শ্রেণিকক্ষে এসব শিক্ষকের বাচনভঙ্গি ও উপস্থাপনা কৌশলও দারুণ। এমন শিক্ষকদের কোনো কারণ ছাড়া এভাবে অব্যাহতি দেওয়ায় তাঁরা বিস্মিত। অনেকে আবার চিঠির ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, চিঠিতে যেভাবে ‘আপনার সার্ভিসের আর প্রয়োজন না থাকায়’ উল্লেখ করা হয়েছে, তা দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা দেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অপমানের শামিল।

অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ কাওসার আহমেদ, বিবিএ অনুষদের শিক্ষক সায়মা হক ও সেন্টার ফর ইউনিভার্সিটি রিকোয়ারমেন্ট কোর্সের শিক্ষক নুরনবী। কর্মকর্তারা হলেন- একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক মরতুজা আলী, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের উপপরিচালক চৌধুরী গোলাম মাওলা, গ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক নুরুল কবির খান, আনোয়ার হোসাইন নূরী, রেজাউল করিম ও প্রকৌশল দপ্তরের মো. শোয়াইব।

অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকদের একজন  বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন সেবা দিলাম। কিন্তু যেভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষকসুলভ ছিল না। চূড়ান্ত অপমানিত বোধ করছি।’

অব্যাহতি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই দশক চাকরি করা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাকে দরকার না হতেই পারে। কিন্তু সেটির জন্য তো নিয়মানুযায়ী অব্যাহতি দিতে পারত। কোনো অভিযোগ থাকলে নোটিশ দিয়ে জবাব চাইতে পারত। শেষ সময়ে এসে এভাবে বের করে দিয়ে অপমান করবে, ভাবিনি।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে গত বছরের শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাঁধে। পাল্টাপাল্টি ট্রাস্টি, উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার নিয়োগের ঘটনাও ঘটে। শেষ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলামের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃত্ব চলে যায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর হাতে। 

আগের ট্রাস্টি বোর্ড বাতিল করে নদভীকে চেয়ারম্যান করে ২১ সদস্যের নতুন বোর্ড অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে এই ট্রাস্টি নিজেদের মতো করে ঢেলে সাজাতে শুরু করে। শুরুতে বেশ কিছু অফিস সহকারীকে ছেঁটে ফেলা হয়। কয়েকমাস আগে একজন প্রকৌশলীসহ বেশ কিছু কর্মকর্তাকেও অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার কোপ পড়ল শিক্ষকদের ওপর। 

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সকালে চাকরি থাকলেও দেখা যাচ্ছে বিকেলে নেই। কখন চাকরি চলে যায়- এই নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে।’ 

শিক্ষক কর্মকর্তাদের অব্যাহতি দেওয়ার চিঠিতে সই করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শফীউর রহমান। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে একাধিকবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। পরে এসএমএসে প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। কিন্তু প্রশ্ন পাঠানোর পরও আর জবাব দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফকে ফোনকল করা হলেও তিনি জবাব দেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045630931854248