আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দ্বিতীয় কিস্তিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল-আইএমএফের ঋণের ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ। বুধবার সংস্থাটির পর্ষদ সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বহুল আলোচিত মোট৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (৪৭০ কোটি ডলার) ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। সেবার অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে ছাড় হয় ওই অর্থ।

অর্থমন্ত্রীর বরাতে রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

দ্বিতীয় কিস্তির এ ঋণ অনুমোদন করার আগে সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশে সংস্কারের পদক্ষেপগুলো পরিদর্শন করে যায় আইএমএফের প্রতিনিধি দল। এরপর তাদের মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বুধবার আইএমএফের পর্ষদে তা অনুমোদন পেল।

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চায়। বহু প্রত্যাশিত ঋণের প্রস্তাব গত ৩১ জানুয়ারি অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি।

দ্বিতীয় কিস্তির এ অর্থ অনুমোদনের আগে প্রথম কিস্তিতে দেওয়া ঋণের শর্তের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা দেখতে অক্টোবরে এসেছিল সংস্থাটির রিভিউ মিশন। কিছু শর্ত অপূর্ণ থাকার কথা তখন তাদের জানিয়েছিল বাংলাদেশ। কারণও তুলে ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণের।

ওই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে করা আর্থিক খাতের রিফর্ম অ্যাগ্রিমেন্ট (সংস্কার) বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখেছিল সংস্থাটি। ছয়টি শতের্র মধ্যে দুটিতে পিছিয়ে থাকার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। জুন পর্যন্ত রিজার্ভের স্থিতি কাঙিক্ষত মাত্রায় ধরে রাখতে না পারা এবং জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় করতে না পারার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছিল।

জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীল সরকার এলে সংস্কারের বাকি পদক্ষেপও বাস্তবায়ন করা হবে-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুরোধ করা হয়েছিল।

সন্তোষজনক অগ্রগতিতে ওই সময়ে আসা রিভিউ মিশন সফরের শেষ দিনে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল। তখন একে ‘স্টাফ লেবেল অ্যাগ্রিমেন্ট’ বলে বিবৃতি দিয়েছিল আইএমএফ। এরই পরবর্তী ধাপে এল বোর্ডের অনুমোদন।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরও চার কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। এ অর্থ রিজার্ভের ওপর চাপ কমিয়ে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি দূর করতে ভূমিকা রাখবে যা অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে কাজে দেবে বলে আশা নীতি নির্ধারকসহ অর্থনীতিবিদদের।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকা দর অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে।

তখন দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফ এর কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের এই ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।

ঋণের অর্থ ছাড়ের আগে ও পরে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে। এরপরই গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ।

প্রতিবারই কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আগের কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত বাস্তবায়ন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ।

সংস্থাটির সঙ্গে করা সমঝোতায় আর্থিক ও রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি ভর্তুকি কমিয়ে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের পথে হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। রয়েছে বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী করা, মুদ্রানীতি আধুনিকায়ন করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ; যেগুলোর অনেকখানি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ।

তবে শর্তের মধ্যে থাকা সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সক্ষমতা অর্জন করা যায়নি।

গত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ হয় বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে তা ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ কিস্তি অনুমোদনের পর কয়েক দিনের মধ্যেই তা ছাড় হয়ে আসছে অতীতে। এ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে বাংলাদেশের।

এর আগে গত সোমবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে ৪০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশের সঙ্গে। এ অর্থও রিজার্ভে যোগ হলে মাস শেষে মোট রিজার্ভ আরও বাড়বে আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0086801052093506