এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজের বিরুদ্ধে কতিপয় আইনজীবীর স্লোগান দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট বলেছে, ‘অশ্লীল স্লোগান! কমলাপুরের কুলিরাও তো এমন করে না। এটি কোনো ভাষা?’ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এসব কথা বলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগে ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের প্রতি আদালত অবমাননার স্বতঃপ্রণোদিত রুল দেয়। ব্যাখ্যা জানাতে তাদের ২৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশ অনুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের আজ আদালতে হাজিরের পর এ-সংক্রান্ত শুনানিতে হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করে।
সোমবার আদালতে ২১ জনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নূর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুরুতে ২১ জনের পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ২১ জন হাজির হয়েছেন। আদালত অবমাননার আরেকটি বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ রয়েছে। একসঙ্গে শুনানি হোক।
আদালত বলে, ‘দুটি ঘটনা এক নয়। দিন দিন মাত্রা বাড়ছে। এটি অশ্লীল একটি ঘটনা। আগেরটি ছিল দাম্ভিকতা ও বেয়াদবি। আর এটি হচ্ছে অশ্লীল। এসএসসি পাস কোনো লোকও এ রকম কথা বলে না। এখানে দেখি দুজন শিক্ষানবিশ আছেন, উনারা কারা?’
তখন শফিকুল ইসলাম ও কাজী ইকবাল নামে দুজন শিক্ষানবিশ আদালতের ডায়াসের সামনে আসেন। কোন কলেজ থেকে পাস করেছেন, সিনিয়র কে—আদালতের এমন প্রশ্নের উত্তর দেন তারা। মৃদুস্বরে শফিকুল নিজের নাম বলেন। তখন আদালত বলে, ‘আপনার সাউন্ড তো অনেক বড়। পেছনের জনের নাম কী?’ আদালতের প্রশ্নের জবাবে অপর শিক্ষানবিশ বলেন, কাজী ইকবাল।
আদালত বলে, ‘অশ্লীল স্লোগান! কমলাপুরের কুলিরাও তো এমন করে না। এটি কোনো ভাষা? সব আইনজীবী শ্রেণির লজ্জিত হওয়া উচিত। কালো পোশাকধারী কোনো ব্যক্তি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন? এমন ভাষা ব্যবহার করতে দেখিনি। এটি কোন রাজনৈতিক ভাষা, কোন আন্দোলনের ভাষা? এত অশ্লীল!’
এর আগে ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট ৫ জানুয়ারি আদালত অবমাননার স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঞাসহ তিন আইনজীবীকে তাঁদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলো। এ অবস্থায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ ও ৮ জানুয়ারি এজলাস চলাকালে কতিপয় আইনজীবী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেন। এতে বিচারকাজ বিঘ্নিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ৯ জানুয়ারি একটি চিঠি পাঠানো হয়। বিষয়টি উপস্থাপনের পর ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমানসহ ২১ জনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেয়। ব্যাখ্যা জানাতে তাঁদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।