করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে- এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। অথচ এরই মধ্যে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এই পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী। তাদের অনেকে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অনশন এবং ৭৮ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবু সালেহ রনি।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায় পরীক্ষার্থীদের দাবি, করোনাকালে আদালত, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর চেম্বার ও কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় তারা লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেননি। আবার প্রায় ৫০০ পরীক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত। যাদের অনেকে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে পরীক্ষা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলেনি। এ অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে দোটানায় রয়েছেন তারা। এরই মধ্যে লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নজরে নেওয়া হলে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
করোনা আক্রান্ত পরীক্ষার্থী মো. ইমরান বলেন, 'করোনায় আক্রান্ত হয়ে শারীরিক-মানসিক ও আর্থিকভাবে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। একই সময়ে দেশের কিছু অঞ্চলে বন্যা চলছে। এমন সব পরিস্থিতির মধ্যে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে।
অথচ পরীক্ষা গ্রহণের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সাপেক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হবে।'
লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে বার কাউন্সিল গত ২৬ জুলাই নোটিশ জারি করে। সেখানে একটি অংশে বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ খোলা সাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ পরীক্ষা গ্রহণে সম্মত রয়েছে। সেইমতে হল পাওয়া সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের সচিব জেলা জজ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এখনও আমরা ২৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুত আছি। এরপরও করোনা সংক্রমণ নিয়ে যদি কোনো বিশেষ পরিস্থিতি দেখা দেয় তাহলে পরীক্ষা পেছানো হতে পারে। সেটি হলে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।'
পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি, অর্থাৎ এমসিকিউ পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। সেক্ষেত্রে এখন ১৩ হাজার শিক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণে সমস্যা হবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বণ্টন নিয়ে পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আগে যেখানে দুটি বেঞ্চে চারজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন, সেখানে এবার আমরা দু'জনকে বসাব। এ ছাড়া পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে পরীক্ষার্থীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হবে। পরীক্ষার্থীদেরও হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।'
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রায় ৫০০ পরীক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত। তাদের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বার কাউন্সিলের কোনো বিশেষ উদ্যোগ আছে কিনা- এমন প্রশ্নে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এ বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের কোনো আবেদন পাওয়া গেলে বিষয়টি বার কাউন্সিল কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।'
বার কাউন্সিলের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন সম্মিলিত শিক্ষানবিশ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি সুমনা আক্তার লিলিও এবারের পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'আগে শুধু ভাইভা পরীক্ষা নিয়েই আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হতো। পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যুক্ত করা হয়। অথচ ২০১২ সাল থেকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা, অর্থাৎ পরীক্ষার তিনটি ধাপ করা হয়েছে। এটি কোনো সরকারি চাকরি নয়। তালিকাভুক্ত আইনজীবীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করেই এ পর্যায়ে এসেছেন। তাদের জন্য এই করোনাকালে লিখিত পরীক্ষার আয়োজন দুর্ভোগের চেয়েও বেশি কিছু। আশা করছি সরকার, আইন মন্ত্রণালয় ও বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।'
আইন অনুযায়ী পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ অবস্থায় জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, 'এখন তো সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বার কাউন্সিলের পরীক্ষা গ্রহণ দুটো এক বিষয় নয়। অন্য কোনো সমস্যা না হলে এখনও ২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি। মন্ত্রীর সঙ্গে এখনও কোনো কথা হয়নি। যদি ভিন্ন কিছু হয়, তাহলে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
বার কাউন্সিল বিধি অনুযায়ী, আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হলে পরীক্ষার্থীদের প্রিলিমিনারি (নৈর্ব্যক্তিক), লিখিত ও ভাইভা (মৌখিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আইন পেশা পরিচালনার জন্য দেশে বার কাউন্সিলই সনদ প্রদানকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৫০ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৮৫৮ জন এবার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন।