আইনি জটিলতায় আটকা ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ

রুম্মান তূর্য |

বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগ আইনি জটিলতায় আটকে আছে। এসব পদে নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী আবেদন করেছেন। কিন্তু এ নিয়োগ সম্পর্কিত কিছু আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান। 

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রকাশিত বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩ লাখ ৪৩ হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী আবেদন করেন। সে হিসেবে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির প্রতিটি পদে ২২ জনের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। চলতি মার্চ মাসেই এ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল এনটিআরসিএর।

কিন্তু, এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় মাসের ডিপ্লোমাধারী আইসিটি শিক্ষক পদে নিবন্ধিত প্রার্থীরা এবং একই ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইসিটি শিক্ষক পদে ইতোমধ্যে নিয়োগ পাওয়া ইনডেক্সধারী শিক্ষক-প্রভাষকরা পরবর্তী নিয়োগগুলোতেও সুপারিশ পেতে আদালতে মামলা করেছেন। যদিও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালায় ছয় মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি শিক্ষক পদে নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালাতেও ছয় মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। যেসব প্রার্থী ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে আইসিটি শিক্ষক হতে নিবন্ধিত হয়েছিলেন, আর যারা ইতোমধ্যে আইসিটি শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তারা নতুন করে নিয়োগ পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছেন। 

বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল নিয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল নিয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে মত জানতে চেয়েছেন। আমরা মতামত পাঠিয়েছি। কিন্তু আদালত ছুটি হয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে তা বলা যাচ্ছে না। 

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ছয় মাসের ডিপ্লোমায় ইনডেক্সধারীরা ইতোমধ্যে শিক্ষকতা করছেন। তারা এমপিওভুক্ত আছেন। কিন্তু তারাই আবার নিয়োগ পাওয়ার জন্য মামলা করেছেন। ফলে বেকারদের নিয়োগটাও বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত নিয়োগ সুপারিশ করার চেষ্টা করছি।  

এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১৫ হাজার ১৬৩ শিক্ষক পদে আবেদন নেয়া হয়েছিলো। এ গণবিজ্ঞপ্তির ১৫ হাজারের বেশি পদে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। এরমধ্যে এমপিও পদ ছিলো ১২ হাজার ৮০৭টি ও ননএমপিও পদ ছিলো ২ হাজার ৩৫৬টি। এসব পদে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৭টি আবেদন পাওয়া গেছে বলে এনটিআরসিএকে জানিয়েছে টেলিটক।

এদিকে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা আরবি বিষয়ের নিবন্ধিত এক নারী প্রার্থী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে নিয়োগ সুপারিশ পাইনি। বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে মহিলা কোটার পদে আবেদন করেছি। আশা ছিলো ঈদের আগে নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হবো। কিন্তু কি হয় কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। 

এদিকে ছয় মাসের ডিপ্লোমায় ইনডেস্কধারীরা বলছেন, নীতিমালায় উল্লেখ আছে ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আগের যোগ্যতা নিয়ে নিয়োগ পাবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বদলানোর জন্য নতুন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা হলে আমাদের সুপারিশ করা হয় না ছয় মাসের ডিপ্লোমার কারণে। এটি আইন সম্মত নয় বলে আমরা মনে করি।

অপরদিকে ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে বেকার প্রার্থীরা বলছেন, আগে ছয় মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি শিক্ষক পদে সুপারিশ করা হলেও নতুন নীতিমালা অনুসারে আমাদের সুপারিশ করা হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের নিবন্ধন সনদ দিয়েছে এনটিআরসিএ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030040740966797