পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকা লুট হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে। দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, প্রকৌশলী ও কিছু ঠিকাদার সিন্ডিকেট মিলে গত ১৪ বছরে এই অর্থ লুটে নিয়েছে। পুরো আওয়ামী শাসনের সময়জুড়ে ছয় থেকে আটজনের প্রভাবশালী ঠিকাদার গ্রুপের দাপটে সাধারণ ঠিকাদাররা ছিলেন অতিষ্ঠ। নানা উপায়ে অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন, দরপত্র প্রক্রিয়ার তথ্য ফাঁস, সমঝোতার নামে প্রকৌশলীদের অনৈতিক সুবিধা আদায়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়ে উঠেছিলো শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়। ৫ আগস্ট দেশের রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনের পর অনিয়মের বিষয়গুলো একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানা গেছে, এই দপ্তরের একজন সহকারী প্রকৌশলী অনুপম বড়ুয়া দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে গড়ে তোলেন অবৈধ ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। তারা কাজ শেষ হওয়ার আগেই অতিরিক্ত অগ্রিম বিল পরিশোধে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, অনুপম সিন্ডিকেটের এক ঠিকাদার গত এক বছরে এক প্রতিষ্ঠানের নামে ২২টি কাজ পেয়েছেন। অপর এক সদস্যকে কাজের অতিরিক্ত রানিং বিল দেয়া হয়েছে। অনুপম বড়ুয়ার সহযোগী ছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী-২ জামাল উদ্দীন আহমেদ ও উচ্চমান সহকারী মো. আলী।
এই সিন্ডিকেটভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল কনস্ট্রাকশন, লাকী এন্টারপ্রাইজ, তায়াক্কুল এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদার্স সিন্ডিকেট, এ.টি কনস্ট্রাকশন ও জসিম এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ.টি কনস্ট্রাকশনকে বাঁশখালী উপজেলায় একটি মাদরাসার কাজের জন্য প্রাপ্ত টাকার চেয়ে গত জুন মাসে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আইডিয়াল কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে ২২টি কাজ পাইয়ে দিয়েছেন তিনি।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের প্রভাব খাটিয়ে সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে এসব কাজ করিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তায়াক্কুল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের ছয়তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের কাজ পেয়েছিলো। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কলেজের সেই কাজ না করে রেখে দেয়। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির পক্ষ থেকে মৌখিক অভিযোগের পর সেই ঠিকাদারের কাজ বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর।
শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর চট্টগ্রামের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী দীপঙ্কর খীসা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত অর্থবছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের ১৯টি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। যার মধ্যে ১০টিই পুরনো প্রকল্প। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব প্রকল্পের জন্য পুনঃ দরপত্রের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে কাজের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের নানা প্রলোভনে লোভ সামলাতে না পেরে জড়িয়ে পড়ছেন নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে। এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী অনুপম বড়ুয়ার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।