সম্প্রতি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সব মামলাই হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এজাহার দাখিল না হলে মামলার পরবর্তী প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তবে এজাহারে কোনো ভুল থাকলে বা কারও নাম এলে তদন্ত প্রতিবেদনে যেন সঠিক তথ্য উঠে আসে, সেই তাগিদ আইনজীবীদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনায় এ পর্যন্ত অনেকগুলো হত্যা মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ অনেককে। এসব মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যাও অনেক।
মামলার এজাহার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ মামলার বর্ণনা অনেকটা একই রকম। এজাহারে নাম না থাকলেও অজ্ঞাত আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে অনেককে। এতে মামলা দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেক আইনজীবী। তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফৌজদারি অপরাধের মামলা না হয়ে কোনো আক্রোশ থেকে হলে বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে আগের সরকারের মতো আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘যেসব মামলা আসলে অপ্রাসঙ্গিক, সেগুলো নাও টিকতে পারে। ক্রিমিনাল কেসের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এখানে স্পেসিফিক অভিযোগ থাকতে হবে। এ ছাড়া তারিখও থাকতে হয়। এমনকি কোন সময় কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তা ক্রমবিন্যাস করে আসলে ক্রিমিনাল কেস করতে হয়।’
অনেক আইনজীবী আবার বলছেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী হিসেবে এজাহারে অনেকের নামই আসতে পারে। ঘটনাস্থলে সশরীরে না থাকলেও পরিকল্পনায় জড়িত থাকতে পারেন তারা। তদন্তের পরই উঠে আসবে প্রকৃত অপরাধীদের নাম।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘ধরেন, ১০০ জনের ওপর মামলা হলো। তদন্তের পর হয়তো দেখা গেল ৪০ জন এর সঙ্গে জড়িত। বাকি ৬০ এর সঙ্গে জড়িত না। এমনও দেখা যেতে পারে, এই ১০০ জনের বাইরের অনেকের নামও চলে আসছে। হয়তো তারা কোনো না কোনোভাবে জড়িত। এসব মামলার কার্যক্রমে আসলে তদন্তের ওপরই টিকে থাকবে।’
হয়রানিমূলক মামলা যেন না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি কোনো অপরাধী যেন ছাড় না পায়, সেটিও খেয়াল রাখার পরামর্শ আইনজীবীদের।