আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল: প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক:  আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক দল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার গণভবনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বিদেশে অবস্থান করার সময়ই ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপরই তিনি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।

দিবসটি উপলক্ষে গণভবনে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে তিনি নির্বাসনের সময়ের ঘটনা, দেশে ফেরার পরে জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে গোছানোর বিষয়টি বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন ফিরে এসেছিলাম, এত বড় দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ছিল না, ছাত্রলীগ করার সময় নেতা হওয়ার চেষ্টা করি নাই। দলের প্রয়োজনে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটাই পালন করেছি। কিন্তু যখন এ দায়িত্ব (আওয়ামী লীগ সভাপতি) পেলাম, এটা বড় দায়িত্ব।’

আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী বড় সংগঠন বলেন দলের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘কী পেলাম না পেলাম—সেই চিন্তা করিনি। ভবিষ্যৎ কী—সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

দলীয় নেতাদের তিনি বলেন, ‘এটাই মনে রাখবেন, একটা দল করি শুধু নেতা হওয়া না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম। এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।’ আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পরে যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যাঁরা করেছেন, তাঁরাই অপরাধী হয়ে গেলেন। যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল—তারাই ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল, দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা–কর্মী। এরপর লড়াই-সংগ্রাম করে এইটুকু বলতে পারি পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।’

আওয়ামী লীগের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারফিউ, প্রতি রাতে মার্শাল ল, দেশের মানুষের কোনো আশা নেই, শুধু হতাশা। এই হতাশ জাতিকে টেনে তোলা যায় না। তাদের মধ্যে আশার আলো জ্বালাতে হয়, ভবিষ্যৎ দেখাতে হয়, উন্নত জীবনের চিত্র তুলে ধরতে হয়। তবেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করেছি।’

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্টের আগে বিদেশে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আশা করেছিলাম, আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি।’ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না যে আমাকে এত বড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমি কখনো এটা ভাবতে পারিনি।’

জিয়া বাড়ি-গাড়ি দিতে চেয়েছিল, কিছুই নিইনি

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়েছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বক্তব্য রাখলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি যখন যাই, তখন কামাল, জামাল, রোজি, খুকি সবাই বিমানবন্দরে ছিল। আমি যখন ফিরে আসলাম, হাজার হাজার মানুষ; কিন্তু আমি পেলাম বনানীতে সারি সারি কবর।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম। আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। বলেছিলাম, তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না।’

সে সময়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম, সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল, তাঁর স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিল, আমি দেখা করিনি। লন্ডনে যখন—তখনো দেখা করতে চেয়েছিল, আমরা দেখা করিনি। আমি যখন আসলাম, ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটা তো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।’

দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন, থাকবেন—সেটা জানতে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু আমার পরার কাপড়চোপড়, দুটো স্যুটকেস ও পুতুলকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) নিয়ে আমি চলে এসেছি। তারপর এই যাত্রা শুরু। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা–কর্মী ও দলকে গোছানোর চেষ্টা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই, কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, তাঁর বাংলাদেশ, তিনি যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো - dainik shiksha অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ - dainik shiksha সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের - dainik shiksha সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026469230651855