আগামী নির্বাচনে কোনো এমপিকে জেতানোর দায়িত্ব আমার না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের কোনো এমপিকে জেতানোর দায়িত্ব নেবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ কথা জানান তিনি। রুদ্ধদ্বার সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সারা দেশে ইভিএমে হবে। ফলে বিকল্প উপায়ে ভোটে জিতে যাওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই। রোববার (৮ মে) দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন, পাভেল হায়দার চৌধুরী। 

সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা  জানান, প্রধানমন্ত্রী সভায় মন্তব্য করেন, গত নির্বাচন নিয়ে এখনো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাকে জবাব দিতে হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন,  আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন হবে। যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে সারা দেশে জরিপ চলছে বলেও সবাইকে জানান তিনি।

দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি বৈঠকে পরিষ্কার হতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছুই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবার। বিএনপি নেতা তারেক রহমান এবার রমজানে ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করেছে। পশ্চিমা দেশে অন্তত ৫০টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। তারা কিন্তু চুপ করে বসে নেই। তিনি আরও বলেন, দল গোছাতে হবে। সর্বস্তরে সম্মেলন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। দলীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মেলন যথাসময়েই হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য ১৪ দলীয় জোটে থাকা ছোট দলগুলো যারা অনেকটাই অস্তিত্বহীন, তাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, জোট থাকবে। ওই নেতা সহযোগী সংগঠনের ব্যাপারটি আলোচনায় টেনে আনলেও দলীয় সভাপতি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।

বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গেলে কিছুটা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তার সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আগে যখন বিমানে সফর করতাম তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাতে অন্ধকার দেখাত। এখন বিমান ভ্রমণে যখন যাই নিচে সবই আলোয় পরিপূর্ণ দেখতে পাই।

তার এ বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কি সাংগঠনিক প্রতিবেদনের অংশ? এরপর আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আমার বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অনেক নেতা। আমরা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি, আপনার বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।

এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা রসাত্মক ভঙ্গিতে তার কাছেও জানতে চান, এগুলোও কি সাংগঠনিক প্রতিবেদন?

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সংক্ষিপ্ত করলে দলীয় সভাপতি বলেন, তোমার এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত। তোমার এত কম কেন? অবশ্য স্বপন এরপর তার প্রতিবেদন উপস্থাপন খানিকটা দীর্ঘ করেন।

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমার প্রতিবেদন তো রমেশ চন্দ্র সেন দাদা বলেই দিয়েছে। তুমি বস।

জানা গেছে, বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের প্রতিবেদন পেশ করেন। সেখানে তারা তৃণমূলের সম্মেলন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত দেন, যেসব সাংগঠনিক শাখায় এখনও সম্মেলনে হয়নি, সেই শাখার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যারা বিরোধিতা করেছেন, তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার। তবে তার আগে তাদের কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, যদি কোনো সাংগঠনিক শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ ওঠে, তাদের সম্মেলন কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি। এক্ষেত্রে প্রস্তুতি কমিটি করে করে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে শ্রম মন্ত্রণালয়ে শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের অফিস রয়েছে জানিয়ে বলেন, এটা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেন সচিবালয়ে থাকবে?

শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শ্রমিক নেতা বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি তো দাওয়াতই পাই না।

জানা গেছে, দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমন্বয়ের কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হচ্ছে। কিন্তু সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হচ্ছে না, এতে আমাদের তৃণমূলের সব সংগঠনকে নিয়ে দলীয় কর্মকা- পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিভাগওয়ারি আটটি কমিটি রয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়েও তারা দেখভাল করবেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, দলীয় সভাপতি তার বক্তব্যে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সম্মেলনের কথা বললেও, সম্মেলনের তারিখ কিংবা সম্মেলনকে ঘিরে উপকমিটির বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেননি। এতে করে কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যারা নির্বাচন করবে স্বাগত : আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন করতে চায় তাদের স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এ বৈঠক শুরু হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে রাত ১১টা ৫ মিনিটে একের পর নেতাকর্মী গণভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। বৈঠক শেষে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা যারা নির্বাচন করবেন, তাদের স্বাগত। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে।

তিনি বলেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন, পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। সারা দেশের আওয়ামী লীগের মেম্বারশিপ, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুই-তিনটা বিষয় আজ এখানে এসেছে। নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী এবং জলঢাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শোকজ করে নোটিস দেওয়ার জন্য। তাদের কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে সব জায়গায় বিদ্রোহীরা পদে আছে, সেসব জায়গায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলনের কাজ সমাপ্ত করতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সকল শাখা বিশেষ করে উপজেলা এবং জেলা সম্মেলনগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। আমাদের অন্তত ৪০টা উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে এবং সাতটির মতো জেলায় ১২ মে থেকে শুরু হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন এবং জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সুশৃংখল সুসংগঠিত পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করাতে হবে পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ের জন্য। আর বিরোধী দলের ব্যাপারে আমরা চাই, তারা মিছিল-মিটিং, সমাবেশ স্বাধীনভাবে করুক। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না।

কার্যনির্বাহী সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল শোকপ্রস্তাব পাঠ, ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও ১১ জুন কারামুক্তি দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, সাংগঠনিক ও বিবিধ।

২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর সর্বশেষ সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়েছিল। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক বৈঠক হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029981136322021