আগের নিয়মে নন-ক্যাডারে নিয়োগ চান উত্তীর্ণরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে পাঁচ হাজারের অধিক শূন্য পদ থাকলেও চলমান বিসিএসে বন্টন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগের নিয়মে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরিতে যোগদানের সুপারিশসহ চার দফা দাবি জানানো হয়েছে।

এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) আগারগাঁও পিএসসি ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।

পরে পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মানববন্ধন স্থগিত করেন তারা।

এসময় দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ও অসংখ্য ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন ৪০তম বিসিএসের নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।

জাকিয়া আনজু গাজীপুর কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে বিভিন্ন দফায় বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হন। জীবনের শেষ চেষ্টা হিসেবে ৪০তম বিসিএসকে বেছে নেন। এতে সফল হওয়ার জন্য দিন-রাত পরিশ্রমও করেন তিনি। তার প্রচেষ্টায় নন-ক্যাডারের যোগ্যতা অর্জন করলেও পিএসসির নতুন নিয়মের কারণে তার নিয়োগ অনশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরীক্ষায় পাস করে চাকরি নিশ্চিত করতে এখন আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। 

জাকিয়া আরজু বলেন, ২০১৮ সেপ্টেম্বর ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় পরে আর এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। সে কারণে এটি জীবনের শেষ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে নন ক্যাডার নিজের যোগ্যতা অর্জন করি।

তিনি বলেন, করোনার কারণে এ বিসিএসে নন-ক্যাডারের ফলাফল প্রকাশে সাত বছর বিলম্ব করা হয়। ৪০তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের একদিন আগেও ৩৮তম বিসিএসে নন ক্যাডারের সর্বশেষ শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের পরে যতগুলো নন-ক্যাডারের শূন্য পদ থাকে সেখানে যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। করোনার কারণে ৪০তম বিসিএসে দীর্ঘ সময় বিলম্বের পর পিএসসি এখন নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে। বর্তমানে সব শূন্য পদ চলমান বিসিএস পরীক্ষার নন ক্যাডারের প্রার্থীদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে। এ নতুন নিয়মে তাদের অনেকে চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে দাবি করেন তিনি।

আন্দোলনকারী সোহাগ সিদ্দিকী নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা শুনেছি বর্তমানে ৫ হাজারের মতো নন ক্যাডারের শূন্য পদ রয়েছে। সেটি যদি চলমান বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে বন্টন করে দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি প্রার্থী চাকরির সুযোগ পাবেন না। আমরা বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে বিগত সাত বছর ধরে চাকরির জন্য অপেক্ষা করছি। পিএসসি চেয়ারম্যান এখন নতুন নিয়ম করে আমাদের বঞ্চিত করছেন।

তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ প্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। কারো বিয়ে হয়েছে। নতুন করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আর সুযোগ নেই। নতুন নিয়মের বিষয়টি আগে ঘোষণা করা হলে আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চেষ্টা করতাম। যেহেতু নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলে নিশ্চিত চাকরি পাওয়া যায়, সে কারণে এতদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছি। নতুন নিয়ম বাতিল করে বর্তমান সব শূন্য পদে নিয়োগের দাবি জানানো হয়।

তিন বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন নাহিদা ফারহানা। রাজধানীর উত্তরা থেকে সকাল ৯টায় এসে তিনি মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। সেটি বাদ দিয়ে জীবনের শেষ চেষ্টা হিসেবে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। এতে সফল হলেও পিএসসির নতুন নিয়মের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বয়স নেই। এখন এসে নতুন নিয়ম করে চাকরি থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ঘোষণা আগে দেওয়া হলে অন্য কোথাও চেষ্টা করতাম। সব প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে পিএসসি চেয়ারম্যানের কাছে তিনি মানবিক আবেদন জানান।

আন্দোলনকারীরা জানান, ৪০তম বিসিএসের নন ক্যাডার পাস করা প্রার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি পিএসসি চেয়ারম্যান ও সব সদস্যদের কাছে স্মারকলিপি হিসেবে দিয়েছেন। আমাদের কাউকে বঞ্চিত করা হবে না বলে চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছেন। তবে বাস্তবে তার ভিন্নতা থাকায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038750171661377