আগে প্রকাশ হওয়া প্রশ্নপত্রে ১৩৫ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা

জামালপুর প্রতিনিধি |

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগে প্রকাশ হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ম লঙ্ঘন করে কিন্ডারগার্টেন সমিতির কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এতে অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরীক্ষাসংক্রান্ত পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের প্রশ্নপত্র কিন্ডারগার্টেনে দেওয়া যাবে না। কিন্তু ওই নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস ৩ আগস্ট দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেনে প্রশ্নপত্র বিক্রি করেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়, কিন্ডারগার্ডেন, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কিন্ডারগার্টেনগুলোতে গত ৫ আগস্ট থেকে এ প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা শুরু হয়। একই প্রশ্নপত্রে পরদিন ৬ আগস্ট থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা শুরু জয়। পাঁচ দিন ধরে আগের দিন বা সকালে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে যেসব প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, সেই একই প্রশ্নপত্র দিয়ে পরদিন বা একই দিন বিকেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পৌরসভার নাছের উদ্দিন প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা হয়। পৌরসভার শিমলাপল্লী সাইদুর রহমান তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিকেলে একই প্রশ্নপত্রে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়।

কামরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘৭ আগস্ট বিকেলে আমাদের বাংলা পরীক্ষা হয়েছে। ৫ আগস্ট ইউরিকা কিন্ডারগার্টেনে বাংলা পরীক্ষা হয়েছে। আমি সে প্রশ্ন পাইছিলাম। বন্ধুরাও পাইছিল।’

সাতপোয়া গ্রামের অভিভাবক আনিছুর রহমান বলেন, প্রশ্নপত্র যদি আগেই প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে শিশুরা কীভাবে এগিয়ে যাবে। টিও সাহেব কিন্ডারগার্টেনগুলোতে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে কাজটি ঠিক করেননি।

শিমলাপল্লী সাইদুর রহমান তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পরীক্ষার যে সময়সূচি দিয়ে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আব্দুল মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়ামুল নাছির ভূঁইয়া বলেন, ‘এ উপজেলায় ২০১৫ সালে যোগদানের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। এতে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’

উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতির সভাপতি মো. আন্নু মিয়া বলেন, ‘প্রশ্নপত্র নিতে টিও আমাদের চাপ সৃষ্টি করেছেন। প্রশ্নপত্র না নিলে আমাদের শিশুদের সরকারি বই দেবেন না, তাই আমরা প্রশ্নপত্র নিয়েছি। আমরা সকালে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিকেলে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাই প্রশ্নপত্র আগেই প্রকাশ হওয়াটা স্বাভাবিক।’

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, পরিপত্র অনুযায়ী কিন্ডারগার্টেনে প্রশ্ন না দেওয়ার কথা থাকলেও কিন্ডারগার্টেন সমিতির অনুরোধে তাদের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রশ্নপত্র নেওয়ার জন্য তিনি চাপ দেননি। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি কিন্ডারগার্টেন সমিতিকে একই সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর নির্দেশ না মেনে এক দিন আগে পরীক্ষা নিয়েছে। এতে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032110214233398