বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আতফুল হাই শিবলীর জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে আতফুল হাই শিবলী স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান রাহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগের এ স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ড. আতফুল হাই শিবলীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে তাঁর সহপাঠী, সহকর্মী, পরিবারের সদস্যরাসহ বিশিষ্টজনদের নানা লেখা স্থান পেয়েছে। বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষাবিদ আতফুল হাই শিবলীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শিবলীর সহধর্মিণী অধ্যাপক নাজিয়া শিবলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদা খাতুনসহ অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ড. আতফুল হাই শিবলী ছিলেন সজ্জন মানুষ। তিনি মানুষের সঙ্গে, শিশুদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসতেন। তিনি আমার বোনের স্বামী। আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। একবার ড. শিবলী আমার ওখানে গেলেন। তখন তার সঙ্গে আমি বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি। তিনি ইতিহাসের অধ্যাপক হলেও আমার অর্থনীতির ক্লাসে তিনি গিয়েছিলেন। সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। সবার সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আতফুল হাই শিবলী শিক্ষা বৃত্তি চালুর করার দাবি জানান। এ বৃত্তি চালুর ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ড. আতফুল হাই শিবলীর গবেষণার বিষয় ছিলো সামরিক ইতিহাস। তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়েছিলো। তিনি সে বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু পরে সে বিভাগটি অবলুপ্ত হয়েছিলো। এছাড়া তার গবেষণার আর একটি বিষয় ছিলো সংবিধান। ড. শিবলীর থেকে বয়সে ছোট হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সুবাদে তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তিনি ছিলেন সবার পছন্দের মানুষ।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন বলেন, ড. শিবলী সবার সঙ্গে মিশতেন। তিনি আমার বোনের স্বামী। তিনি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন তখন তার ওখানে আমার ছোট বোনরা বেড়াতে যেতো। ফিরে এসে তারা আমাকে বলতো, আপা শিবলী ভাইকে ওখানের রিকশা চালক থেকে শুরু করে সবাই চেনেন। এ বিষয়টি ছোটরা অনেক পছন্দ করতো। ড. শিবলী সবার সঙ্গে মিশতেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ করা যাবে না। নীতি ও ন্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা অবিচল ছিলেন ড. শিবলী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে তিনি যখন কর্মরত ছিলেন তখন এ বিষয়টি আমরা দেখেছি।
অধ্যাপক শিবলীর সহধর্মিণী অধ্যাপক নাজিয়া শিবলী অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ ও এতে লেখা দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠানে ড. আতফুল হাই শিবলীর শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করেন।
ড. আতফুল হাই শিবলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপ-উপাচার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে অবসরগ্রহণের পর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি সিলেটে অবস্থিত একটি বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন। শিবলী ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘলবাক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা আবদুল হাই রাজশাহী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ড. আতফুল হাই শিবলী।