নুসরাত হত্যাআত্মহত্যা বলে চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন এক গডফাদার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাতকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার পর তা আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন এক গডফাদার। নুসরাতের ঘাতকরা ওই গডফাদারের আর্শীবাদপুষ্ট। নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়ার পর তাকে ঘটনাটি ঘাতকরা জানান। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনও নুসরাতের হত্যাকাণ্ডটি আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। মোয়াজ্জেম হোসেন ফেনীর পুলিশ সুপারকে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে অবহিত করেছিলেন। ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম নুসরাতের ঘটনাটি আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা বলে ওই দিন পুলিশ সদর দপ্তরকে জানিয়েছেন।

আগুনে গুরুতর দগ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অবস্থায়ও নুসরাত যৌন নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনড় ছিলেন। তার এই আপসহীন মনোভাব, এলাকাবাসী, আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদের কারণে ঘটনাটি ভিন্নরূপ নেয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে এটাকে হত্যা মামলা হিসেবে নিতে ওসি বাধ্য হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত ঘাতকরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

জানা গেছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ এলাকার প্রভাবশালীরা ওই গডফাদারের ইচ্ছার বাইরে যেতে পারে না। ওসি মোয়াজ্জেম চলতেন ওই গডফাদারের নির্দেশনা অনুযায়ী। ফেনীর মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, দখলবাজিসহ সকল অপকর্মের হোতা হলেন ওই গডফাদার। কোনো কোনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার আগে গডফাদারের অনুমতি লাগে।

মাদরাসা পরিচালনার গভর্নিং বডির সদস্যরা নিয়োগ পেয়েছেন ওই গডফাদারের আর্শীবাদে। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নুসরাত গভর্নিং বডির কাছে বিচার চাইলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি গডফাদারের নির্দেশনায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। নুসরাতের যৌন নিপীড়নকারী অধ্যক্ষের পক্ষে অবস্থান নেয় গভর্নিং বডির সদস্যসহ কথিত গডফাদার।

এই মাদরাসায় যোগদানের আগে অন্য একটি মাদরাসায় থাকাকালে সিরাজ উদ দৌলা অনেক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করেছেন। পাশাপাশি মাদরাসার তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকাও আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। এই সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসায় যোগ দিয়েও সে তার অপকর্ম করে যাচ্ছিল। একের পর এক যৌন নির্যাতন করেন ছাত্রীদের। গডফাদারকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে নিয়োগ বাগিয়ে নেন সিরাজ উদ দৌলা।

এই মাদরাসার এক ডজনেরও বেশি ছাত্রী তার যৌন নির্যাতনের শিকার। তারা কেউ জীবন রক্ষার্থে বা আত্মসম্মানের স্বার্থে বিষয়টি প্রকাশ করেননি। তবে মাদরাসার ছাত্রীদের অনেকেই এ বিষয়ে জানেন কারা অধ্যক্ষের যৌন নির্যাতনের শিকার।

সর্বশেষ নুসরাত এই ঘাতক সিরাজের যৌন নির্য়াতনের শিকার হন। নুসরাতও ছিল প্রতিবাদী এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। সে কোনোভাবেই তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার আপস করেননি। মামলা দায়ের করে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। এজন্যই তাকে মূল্য দিতে হয়েছে প্রাণ দিয়ে।

জামায়াত নেতা হয়েও অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা দোর্দণ্ডপ্রতাপে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আর এটা সম্ভব হয়েছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীদের মাসোহারা দেওয়া। এই মাসোহারা পাওয়া নেতা-কর্মীরাই সিরাজ উদ দৌলার সকল অপকর্ম ঢেকে রাখার চেষ্টা করতেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ওসিসহ এক শ্রেণির কর্মকর্তারা তার কাছ থেকে পেতেন মোটা অংকের মাসোহারা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027320384979248