আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নেও ঘুষ দাবি দুমকি শিক্ষা কর্তার

পটুয়াখালী প্রতিনিধি |

পটুয়াখালীর দুমকির ঝাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সময় সহকারী শিক্ষক ছিলেন মোসা. ফেরদৌসি বেগম। অসুস্থতাজনিত ছুটির আবেদন করেও অনুপস্থিতিজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাঁকে। এ জন্য চাকরিচ্যুতও হয়েছেন। তবে পরে আদালত বকেয়া বেতন-ভাতাদিসহ চাকরিতে ভূতাপেক্ষভাবে পুনর্বহাল করে তাঁকে অবসর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখন আবার তাঁকে আরো গ্যাঁড়াকলে ফেলেছেন দুমকির উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল সিকদার। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নেও পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করছেন এই কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মনিলাল সিকদার পটুয়াখালী জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কলঙ্ক। দুমকিতে ভারপ্রাপ্ত ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে এর আগেও তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিবারই তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষকদের হয়রানি, ঘুষগ্রহণসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। এ ছাড়াও কলাপাড়া উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা রমা রানী রায়কে হয়রানি করার কারণে পটুয়াখালী থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় বদলি হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও এক-এগারোর সময় বরিশাল জেলায় কর্মরত থাকাকালে ঘুষ গ্রহণের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

শিক্ষক ফেরদৌসির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ফেরদৌসির কলেজপড়ুয়া মেয়ে নাঈমা তানজীম মারা যান। অকালে মেয়েকে হারিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। অসুস্থ অবস্থায়ও স্কুলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁর শরীরের বাঁ পাশ পুরোপুরি অবশ হয়ে যায়। এ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত ছুটির আবেদন করেন ফেরদৌসি। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিস তা গোপন করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ফেরদৌসির বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিজনিত অপরাধের প্রতিবেদন পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়। তাও আবার ভুল ঠিকানায়। কিন্তু এসব ঘটনার কিছুই জানতেন না ফেরদৌসি। ২০১১ সালের ২৮ জুলাই মেডিক্যাল সার্টিফিকেটসহ যোগ দিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেলে অনুপস্থিতির জন্য বরখাস্ত হওয়ার কথা জানতে পারেন তিনি। পরে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে প্রমাণিত হয় তাঁর বরখাস্ত বিধিবহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ। একই সঙ্গে মহাপরিচালক ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠি দেন।

এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফেরদৌসি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে আদালত ২০১৮ সালের ২৪ মে তাঁকে বকেয়া বেতন-ভাতাদিসহ চাকরিতে ভূতাপেক্ষভাবে পুনর্বহাল করে অবসর দিতে সব প্রতিপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ রায় বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর পটুয়াখালীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ডিপিইও) নির্দেশ দেন। পরে একই বছরের ১২ নভেম্বর রায় বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলালকে নির্দেশ দেন ডিপিইও। কিন্তু মনিলাল পাঁচ লাখ টাকা ছাড়া রায় বাস্তবায়ন করবেন না বলে ফেরদৌসিকে জানিয়ে দেন।

এর আগে ৪ ডিসেম্বর ডিপিইও ফেরদৌসির বিষয়ে নির্দেশনা মানা হয়েছে কি না, মনিলালের কাছে জানতে চেয়ে প্রতিবেদন চাইলে তা দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদন না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ডিপিইও চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি আবারও মনিলালকে ফেরদৌসির চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর ও বকেয়া বেতন দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু মনিলাল তাও মানেননি।

হতাশ ফেরদৌসি বলেন, ‘আমি হয়রানি এবং ষড়যন্ত্রের শিকার। আইন, আদালত, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবাই আমার ন্যায়ের পক্ষে মতামত এবং নির্দেশনা দিলেও মনিলাল স্যার আমার বিরোধিতা করছেন এবং পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করছেন।’

অভিযুক্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল বলেন, ‘আসলে আমি এ ব্যাপারে (ফেরদৌসি) অজ্ঞ। আমি বুঝছি না। তাই আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। আমার বিরুদ্ধে ঘুষের দাবি কিংবা অন্য সব অভিযোগ সত্য নয়।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু আদালতের নির্দেশনা আছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন ফেরদৌসি বেগমের পক্ষে; তাই আমরা আন্তরিক।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027148723602295