আনার হ*ত্যায় শাহীনের পক্ষে শিমুল, মিন্টুর পক্ষে ‘গ্যাস বাবু’

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

জানা গেছে, মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে কাজ করেছেন মূল হত্যাকারী শিমুল ভুঁইয়া আর ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর পক্ষে কাজ করেছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে ‘গ্যাস বাবু’।

হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে বাবুর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন এবং দেখা করেছেন শিমুল।
এ অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া মিন্টু এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কি না, তা তদন্তে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।

ডিবিপ্রধান বলেন, শিমুল তার জবাবন্দিতে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের এক নেতার সঙ্গে তারা টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। সেখানে অর্থের বিষয়ে কথা হয়। দুই কোটি টাকা লেনদেনের কথা আসে। বলা হয়, বাংলাদেশে যাওয়ার পরই ২০ লাখ দেবেন, আর এক কোটি ৮০ লাখ দেবেন ২৬ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে। সে অনুযায়ী ১৩ মে আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে দেওয়া হয়, যেন কোনোকালেই কোনো দেশের পুলিশ লাশ খুঁজে না পায়।

তিনি বলেন, এরপর হত্যাকারীরা বাংলাদেশে চলে আসেন। শাহীন আমেরিকা চলে যান এবং সিয়াম চলে যান নেপালে। শাহীনের পক্ষে কাজ করেন শিমুল ভুঁইয়া। তেমনি আমাদের বিচার-বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, মিন্টু দায়িত্ব দেন বাবুকে। সে অনুযায়ী ৬ মে বাবু দেখা করেন শিমুলের সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, বাবু রিমান্ডে স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে শিমুলের কথা হয়েছে, খুনের পর তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দেখা করেন। সেখানে শিমুল ছবি দেখান বাবুকে। শাহীনের পক্ষে কাজ করেন শিমুল, আর মিন্টুর পক্ষে কাজ করেন বাবু। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই আমরা কথাটি বলছি।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কিলার শিমুল ভূঁইয়া ও গ্যাস বাবুর জবানবন্দিতে কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এ কারণে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। আমাদের মনে হয়েছে, তাকে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সে কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করি। পরে মিন্টুকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

তিনি বলেন, মিন্টুকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, বাবু ও শিমুলের কথোপকথনের বিষয়টি তিনি কতটা জানেন। বাবু যে কথাটি বলেন, মোবাইল তিনটি মিন্টু নিয়ে যান এবং মিন্টুকে তিনি আনার হত্যার ছবি দেখান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব, কী কারণে তিনি বাবুর মোবাইল নিয়ে গেলেন।

১৫ মে শিমুল পৈশাচিক কায়দায় খুন করে এবং লাশ গুম করে দেশে ফেরেন। সেই ব্যক্তি ঢাকায় আসার পরে তার সঙ্গে মিন্টুর প্রতিনিধি যোগাযোগই বা কেন করলেন? আর আনার হত্যার ছবি যদি মিন্টু দেখেই থাকেন, তাহলে তিনি কেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গোপন করলেন? মিন্টু হত্যাকাণ্ডের কথা যদি ১৬ তারিখ থেকেই জানেন, আমরা কেন ২২ তারিখে জানলাম। কেন তিনি এতো আগে জানার পরও কাউকে বলেননি- এসব প্রশ্ন জানতে চাইবে ডিবি।

ডিবিপ্রধান বলেন, মিন্টু কয়েকবারই কালীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেছেন, মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। শিমুলের জবাবন্দিতে যে টাকা লেনদেনের বিষয়টি এসেছে, সবই আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করব। টাকা লেনদেনের বিষয় সঠিক কি না, জানার চেষ্টা করব, তাহলেই আমরা ধরে নিতে পারব, মিন্টু অর্থদাতা বা নির্দেশদাতা কি না। আমরা সুস্পষ্ট অভিযোগ না পেলে কাউকে ডাকি না।

এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে জানান, মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় তিনি জিডি করেছেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মিন্টুর বুদ্ধিতে মোবাইলগুলো মিন্টুর কাছে দিয়ে তিনি থানায় হারানোর জিডি করেন।  

গ্যাস বাবু ও সাইদুল করিম মিন্টুকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। প্রয়োজনে আবারও শিমুল ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নেওয়া হবে বলে জানান ডিবিপ্রধান।  


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026950836181641